ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও জীবিকার ওপর গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নিতে ফ্যাশন ব্র্যান্ড, সরবরাহকারী এবং সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইন (সিসিসি)।
হিট অ্যান্ড গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স রাইটস ফ্যাশনিং এ জাস্ট ট্রানজিশন শীর্ষক প্রতিবেদনে সংগঠনটি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্বের ৭ কোটি ২০ লাখ শ্রমিক। যার বেশির ভাগই নারী, অভিবাসী ও গৃহভিত্তিক কর্মী, বর্তমানে রোগ, হয়রানি ও মজুরি বঞ্চনার মতো নানান ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তাপমাত্রা বাড়ার প্রভাবে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পোশাকশিল্প; কারণ সেখানে আগে থেকেই গরমের প্রভাব তীব্র। ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব দেশ পোশাক রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এবং একই সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে, সেগুলোর পরিস্থিতি নাজুক। ক্রিটিকাল ৯ নামে চিহ্নিত এমন দেশগুলোর মধ্যে ছয়টি (ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ব্রাজিল) বিশ্বের প্রধান পোশাক উৎপাদনকারী। তবে সমস্যাটি শুধু এসব দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, উগান্ডা ও সার্বিয়ার মতো দেশেও শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্র বা বাড়িতে উচ্চ তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করছেন।
সিসিসি জানিয়েছে, ফ্যাশনশিল্প নিজেই বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে, যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অথচ এ শিল্পে যারা সবচেয়ে কম মজুরিতে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরাই জলবায়ুসংকটের প্রথম ও সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাবের শিকার হচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু ও পরিবেশগত সংকট যত গভীর হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত তাপ তখন শুধু একটি কর্মপরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি হয়ে উঠছে একটি ব্যবস্থাগত হুমকি। এটি বিদ্যমান শ্রম অধিকার লঙ্ঘনকে আরও তীব্র করছে এবং নতুন ধরনের লঙ্ঘনের জন্ম দিচ্ছে। সিসিসি বলেছে, তাপমাত্রা বাড়ার দায় কেবল ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও সরবরাহকারীদের নয়, সরকারগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সরকারকে কর্মক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও আয়ের ওপর যে প্রভাব পড়ে, তার জন্য সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
সংগঠনটির আন্তর্জাতিক কার্যালয়ের প্রতিনিধি জিউসেপ্পে সিওফো বলেন, সরকারগুলোকেও কর্মক্ষেত্রে তাপমাত্রার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিতে হবে এবং শ্রমিকদের সুরক্ষায় এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তাঁর মতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্রে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের বাধ্যতামূলক মানদণ্ড নির্ধারণ, শ্রমিকদের তাপজনিত ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা, অতিরিক্ত তাপের কারণে অসুস্থ হলে ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় আগাম পরিকল্পনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার, সরবরাহকারী এবং ব্র্যান্ডগুলোকে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তনে তাদের অবদান কমাতে এবং শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। শোষণমূলক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মর্যাদাপূর্ণ কাজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং চুক্তির ধরন বা অভিবাসন অবস্থার পার্থক্য ছাড়াই সব শ্রমিকের জন্য সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে হবে। যদি এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে পোশাকশ্রমিকরা জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাবের মুখে পড়বেন, যা তাদের নিরাপত্তা, জীবিকা এবং ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলেও প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।