সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একদিকে বাড়ছে মাদকের বিস্তার, অন্যদিকে মামলা ও মাদক কারবারি গ্রেপ্তারের সংখ্যা। এসব মামলার আলামত হিসেবে উদ্ধার হওয়া মাদকের পরবর্তীতে রাসায়নিক পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে এত দিন এই পরীক্ষা করাতেই ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এমনকি দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক সময় পাল্টে যেত মামলার ফলাফলও। তবে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে রেডিয়ান এসাপ ডাইরেক্ট ম্যাস ডিটেক্টর নামে একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র। সংক্ষেপে এটিকে এমএস মেশিন বলা হয়। এর মাধ্যমে খুব সহজেই মাদকের নমুনা পরীক্ষার কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। ইয়াবা, আইস, কোকেন, কিটামিন, এমডিএমএ, হেরোইনসহ যে কোনো মাদকের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে মাত্র দুই মিনিটেই। এই মেশিন কঠিন ও তরল পদার্থের পিপিএম পর্যায়ের ফলাফলও দিয়ে দিচ্ছে খুব সহজেই। এতে মামলার আলামত প্রমাণে সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি আগের চেয়ে কম সময়ে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষা করা নমুনা মানবদেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে জানিয়ে দিচ্ছে এই যন্ত্র। কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের কর্মকর্তারা বলছেন, এমএস মেশিন ছাড়াও জিসিএমএস, রেমন্স স্পেক্টোমিটার, এফটিআইআর, এইচপিএলসিসহ অত্যাধুনিক মেশিনে এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে মাদকের আলামত। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালেও রাসায়নিক পরীক্ষাগার হওয়ায় কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে নমুনা আসার হার কিছু কমেছে। এতে দ্রুত ফলাফল প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে ৮৪২টি আলামত পরীক্ষা করা হয়েছে এখানে। এর মধ্যে ডিএনসির কাছ থেকে ৬৬৮টি ও পুলিশের কাছ থেকে ১৭৪টি নমুনা পাঠানো হয়। এর মধ্যে ইয়াবার ৩৯৭টি, গাঁজার ২০৭টি, হেরোইনের ৪৭টি, বাংলা মদের ৬টি, চুলাই মদের ২৬টি, ফেনসিডিলের ২১টি, বিদেশি মদের ৪০টি, আইসের ২টি, কিটামিনের ৮টি, কোকেনের একটি, এমডিএমএর ১২টিসহ বিভিন্ন মাদকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার সবকটি নমুনাই পজিটিভ এসেছে। অর্থাৎ মাদক শনাক্ত হয়েছে। ডিএনসির কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারের সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক এস এম রাজিবুর রহমান বলেন, এমএস যন্ত্রটি সংযুক্ত হওয়ায় এখন আগের তুলনায় অনেক দ্রুত সময়ে নমুনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে। প্রথমে রিএজেন্ট টেস্টের পর নমুনা এই যন্ত্রে পরীক্ষা করা হয়। এই যন্ত্রের মাধ্যমে শুধু মাদকের উপস্থিতির হারই শুধু নয়, মাদকের ভয়াবহতাও নির্ণয় করা যায়।
এ ছাড়াও মাদক কারবারিরা দেশে কোনো প্রচলিত বা নতুন কোনো মাদক আনলে সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা যাচ্ছে।