বিদেশ থেকে কার্যাদেশ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রম অসন্তোষ, অর্থসংকটসহ নানা কারণে মহাসংকটে ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এমন অর্থনৈতিক অস্থিরতায় টিকতে না পেরে অনেক এসএমই উদ্যোক্তা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে শুধু ব্যবসায় টিকে থাকতে কর্মী ছাঁটাই, উৎপাদন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ করে অর্ডার কমে যাওয়ায় খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যাংকনির্ভর ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দেশের শিল্প খাতের প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই)। এ খাতে ১ কোটি ১৮ লাখের বেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন। দেশের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ৩২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, দেশে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫% এসএমই খাতে। এ খাতে ৩ কোটিরও বেশি জনবল কর্মরত। কিন্তু সেই খাত এখন হুমকির মুখে।
একজন সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৬-১৭ সালে বর্ষসেরা উদ্যোক্তার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন কাজী সাজেদুর রহমান। এখন তিনি প্রায় দেউলিয়া। এর জন্য ব্যাংকের অসহযোগিতা ও কাঁচামাল আমদানিতে চড়া ভ্যাট ট্যাক্স আরোপকে দায়ী করেন তিনি। কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী কাজী সাজেদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্লাস্টিকের কাপের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব কাগজের কাপ তৈরির জন্য সেরা এসএমই উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাংকের মাফিয়াতন্ত্রের জন্য একবার ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। তার পরও লড়াই করে ব্যবসায় পুরোদমে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবারও সংকটে পড়েছি। ব্যাংক লোনের আবেদন করেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে লোন পাচ্ছি না। বড় লোকসান থেকে বাঁচতে ছোট লোকসান মেনে নিয়ে ফ্যাক্টরির ১০টি মেশিন বন্ধ করেছি। তাতে আমার উৎপাদনও কমেছে, খরচও কমে গেছে।
হোসেন এগ্রোর কর্ণধার রোদোশি সাবিনা তিন বছর ধরে ক্যাটেল ফিড উৎপাদন করছেন। শুরুর দিকে সিজনে ১০০০ থেকে ১২০০ টন ফিড উৎপাদন করতেন। কাঁচামালের অভাবে এই উদ্যোক্তার ফিড উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে ৫০ শতাংশ। জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম দিকে ভুট্টার সিজনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টন ফিড উৎপাদন করতাম। সিজনের সময় কাঁচামাল থাকলে এটি বছরে আড়াই থেকে ৩ হাজার টনে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু চাহিদা থাকলেও কাঁচামালের ও নগদ অর্থের অভাবে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আবেদন করেও ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া যাচ্ছে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে আমরা ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ব্যাংকগুলোকে ৬ শতাংশ ইন্টারেস্টে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের লোন দিতে অনুরোধ করছি। এসএমই ব্যবসায়ীদের আমদানি করা কাঁচামালে ভ্যাট-ট্যাক্স কমাতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়েছি। এ ছাড়া তাদের ক্যাপাসিটি দেওয়া, উৎপাদিত পণ্যের মার্কেটিং করা, বায়ার সাপ্লাইয়ারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মতো কাজ করছি। চলতি অর্থবছরে উনারা আমাদের প্রস্তাবনায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আসা করছি ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাবেন।