দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীপ্রতি অর্থ ব্যয়ের আকাশপাতাল ব্যবধান লক্ষ করা গেছে। ব্যয়ের তারতম্যের কারণে শিক্ষার মানের ক্ষেত্রেও বাড়ছে ব্যবধান। শুধু বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সাধারণ ধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও শিক্ষার্থীপ্রতি অর্থ ব্যয়ের বড় পার্থক্য দেখা গেছে। আর সব থেকে বেশি শিক্ষার্থী থাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ব্যয় সবচেয়ে কম। শিক্ষার্থীপ্রতি অর্থ বরাদ্দ কম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য বলছে, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের শিক্ষাব্যয় অনেক কম। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান হ্রাস পাচ্ছে। অথচ উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব থেকে বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নত করতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
ইউজিসির তথ্যমতে বিশেষায়িত বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি মাথাপিছু বার্ষিক ব্যয় সর্বাধিক ৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৬ টাকা। এর পরেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক ব্যয় ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৩২ আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৩১ টাকা ব্যয় হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষাবছরে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ২৪১, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৪, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ১২ হাজার ৩৪৩ টাকা। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ইউজিসি বলছে, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় সব সময়ই বেশি। তথ্যমতে শিক্ষার্থীপ্রতি সব থেকে কম ব্যয় করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথাপিছু ব্যয় ৭৯৫ টাকা ৫৫ পয়সা। এর পরে রয়েছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ৩ হাজার ৮৬২ টাকা। এ ছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭ হাজার ৩৪০, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭ হাজার ৪৬৮, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৩ হাজার ৭৯৪, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৮ হাজার ৬২১ টাকা শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় হয়েছে।
ইউজিসি সূত্র বলছেন, শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় নির্ধারণে বেতন বাবদ সহায়তা, ভাতা বাবদ সহায়তা, পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তা, পেনশন ও অবসরসুবিধা, গবেষণা অনুদানসহ অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এ ব্যয় আমলে নেওয়া হয়েছে। আরও জানা যায়, ইউজিসি থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো পরিচালন বরাদ্দ দেওয়া হয় না। অধিভুক্ত কলেজগুলোর নিজস্ব আয় থেকে ব্যয় নির্বাহ করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয় না। উপরন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরকারকে ১০০ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে থাকে। শুধু কিছু এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনভাতা বাবদ সরকার শিক্ষার্থীপ্রতি এ ৭৯৫ টাকা ব্যয় করে থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে ভালো মানের লাইব্রেরি নেই, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিসহ ল্যাবেরও সংকট রয়েছে।’ উপাচার্য বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়াতে ও গবেষণার স্বার্থে শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের অন্তত ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা উচিত।’ ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর নিজস্ব আয় রয়েছে। এ আয় দিয়ে তারা চলতে পারে। তবে এ কলেজগুলোতে শিক্ষার মান বাড়াতে ও গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় অনেক কম। মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অনুদান বৃদ্ধি করতে হবে।’