দেশের ফুটবলপ্রেমীদের আজ চোখ থাকবে কুয়েতের দিকে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্লাব বসুন্ধরা কিংস এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্বের যাত্রা করবে আজ। ‘বি’ গ্রুপের উদ্বোধনী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ওমানের আল সিব। সন্ধ্যা ৭টায় জাবের আল মোবারক আল সাবাহ স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র এএফসি ক্লাব ফুটবলে খেললেও কিংসই দেশের একমাত্র দল টানা ছয়বার এ আসরে খেলছে। অবশ্য কিংসের সঙ্গে ঢাকা আবাহনীও এবার প্রিলিমিনারি রাউন্ডে অন্য গ্রুপে খেললেও হেরে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারেনি।
এশিয়ান ফুটবলে অন্যতম শক্তিশালী দেশ হলেও বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে ওমান তেমন পরিচিত নয়। অবশ্য ১৯৮২ সালে ওমান জাতীয় দল ঢাকায় আগাখান গোল্ডকাপ খেলেছিল। ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে তারা যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই সময়ে ফুটবলে ওমান শক্তিশালী ছিল না। এখন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ৭৯ আর বাংলাদেশের ১৮৩। তবে জাতীয় দলের র্যাঙ্কিংয়ে ব্যবধান যাই থাকুক না কেন ওমানের আলসিবকে আবার ধরাছোঁয়ার বাইরে বলা যাবে না। কিংস ঘরোয়া লিগে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হলেও ওমান আলসিব তাদের লিগে চারবার চ্যাম্পিয়ন।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০২২-এ। সে দিক দিয়ে তারা কিংসের চেয়ে এগিয়ে।
বসুন্ধরা কিংস এএফসি ফুটবলে এখন পর্যন্ত বড় সাফল্য পায়নি। তবে আগের পাঁচ আসরে সাত জয়ের রেকর্ড রয়েছে। ২০২৩ সালে মোহনবাগান, মার্জিয়া ওড়িশাকে হারানোর পরও চূড়ান্ত রাউন্ডে যেতে পারেনি। অ্যাওয়ে ফিরতি ম্যাচে ওড়িশার বিপক্ষে ড্র করলেই চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা থাকত। হার মানায় তা আর হয়নি। এবার দুদান্ত ফর্ম নিয়ে কুয়েতে চ্যালেঞ্জ লিগ খেলতে গেছে কিংস। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে কোয়ার্টার ফাইনালে স্থানে পেয়ে তারা। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে বসুন্ধরা কিংস। এখানে দেশের প্রেস্টিজের ব্যাপার রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রতিটি ম্যাচে সেরাটা খেলে ভালো ফল উপহার দেওয়া।’
বাংলাদেশের ঘরোয়া আসরে অভিষেক হওয়ার পর কিংসের আর্জেন্টাইন কোচ মারিও গোমেজের এএফসি ফুটবলে অধ্যায় শুরু হচ্ছে। গতকাল তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘তিন প্রতিপক্ষই দারুণ শক্তিশালী। আমাদেরও তো যোগ্যতা রয়েছে। তা হলে এখানে খেলতে এলাম কীভাবে? প্রতিটি ম্যাচেই সেরাটা দিতে চাই। খেলোয়াড়দের ওপর সেই আস্থা আমার রয়েছে। যার যার পজিশনে সবাই দক্ষ। সবচেয়ে বড় কথা কেউ ইনজুরিতে নেই। উদ্বোধনী ম্যাচ জিততেই আমরা খেলব। এখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কিছু নেই।’
অধিনায়ক তপু বর্মণ বলেন, ‘মাঠে যখন নামব নিশ্চয় হারতে নামব না। বসুন্ধরা কিংস এশিয়ান ফুটবলে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এখানে দায়িত্ব অনেক। জান প্রাণ দিয়ে লড়ব। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’ প্রিলিমিনারি রাউন্ডে দোহায় কিংস যখন আল কারামাহোর বিপক্ষে খেলে তখন কিছুটা বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল। লিগ হাত ছাড়া করে কাতারে উড়ে গিয়েছিলেন তপুরা। তারপরও দুর্দান্ত খেলে জয় পেয়েছে। এবার তো কুয়েতে উজ্জীবিত ফুটবল কিং কিংস। চ্যালেঞ্জ কাপে মোহামেডানকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্লেনে ওঠার কয়েক ঘণ্টার আগে লিগে স্বস্তির জয় নিয়ে গেছে।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জয় না পেলেও জাতীয় দলের কিংসের ফুটবলাররা দুর্দান্ত খেলছেন। হংকংয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে রাকিবের দুর্দান্ত গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। তা ছাড়া ঢাকায় সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ১-২ গোলে হারলেও বাংলাদেশের গোলটি করেন রাকিব। বলা যায় তিনি এখন ক্যারিয়ারে সেরা ফর্মে রয়েছেন। সোহেল রানা (বড়), সাদ উদ্দিন, তাজউদ্দিন, ফাহিমের ফর্মও তুঙ্গে। বিদেশিদের মধ্যে ডরিয়েলটন, সানডে এমানুয়েলও আস্থার পরিচয় দিয়েছেন। এদের সঙ্গে কিউবা মিচেল মানিয়ে নিতে পারলে মাঠে কিংস হয়ে উঠবে অপ্রতিরোধ্য।