মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার খাতিয়াল গ্রামের সেনাপতির দিঘি। সাড়ে তিন শ বছরের প্রাচীন নিদর্শন এ দিঘি ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। শত শত বছর ধরে এ দিঘি ঘিরে চমৎকার রূপকথার প্রচলন আছে। স্থানীয়দের দাবি, অনেকের মনের বাসনাও পূরণ করে এ দিঘি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুবেদার শায়েস্তা খানের জ্যেষ্ঠপুত্র উমেদ খানের নেতৃত্বে ২৮৮ জন নদীপথে যাত্রা করেন। চট্টগ্রাম বিজয়ের পর কিছু উৎসাহী সেনা বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে মগ সেনাদের বিতাড়নের জন্য নৌ অভিযান করেন। সেখান থেকে ফেরার সময় মাদারীপুরের কালকিনির খাতিয়ালে বিশ্রাম নেন। এ সময় তাঁদের পানির সমস্যা দেখা দেয়। তখন এ দিঘিটি খনন করা হয়। ধারণা করা হয়, ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ৬ একর জমির ওপর দিঘিটি খনন করা হয়। বর্তমানে এর গভীরতা প্রায় ১০ ফুটে এসে থেমেছে। দিঘির চারদিকে গাছগাছালি ছিল। মানুষের ঘনবসতির কারণে অধিকাংশ গাছপালা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ দিঘি নিয়ে রয়েছে অনেক রূপকথা। প্রবীণদের মুখে ভিন্ন রকম গল্প শোনা যায়। সমির মিয়া নামে একজন বলেন, ‘এ গ্রামের কারও বিয়ে বা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান হলে তাদের প্রয়োজনমতো রাতের বেলা দিঘির পারে গিয়ে থালাবাসন, হাঁড়িপাতিলসহ বিয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চাইলে ভোরে দিঘিতে ভেসে উঠত। অনুষ্ঠান শেষে দিঘির পারে রেখে গেলে রাতের অন্ধকারে তা মিলিয়ে যেত। একবার এক লোক একটি থালা চুরি করে রাখার পর থেকে আর কেউ দিঘি থেকে থালাবাসন চাইলেও ভেসে ওঠেনি।’ হামিদ মোল্লা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এ দিঘিতে অনেকে মনের আশা পূরণের জন্য মানত করে। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।’
কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক রাহাত হোসাইন বলেন, ‘সেনাপতির দিঘি মোগল আমলে খনন করা হয়, যা সাড়ে তিন শ বছর ধরে টিকে আছে। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, এ দিঘি যেন কেউ দখল করতে না পারে। এ দিঘি ঘিরে সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।’ মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল আলম বলেন, ‘জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে। যেহেতু দিঘিটি অনেক পুরোনো এবং ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই এটির প্রতি আমাদের আলাদা নজর রয়েছে।’