ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও ডামি নির্বাচনের এমপি আবদুল কাদের আজাদ ওরফে এ কে আজাদকে ফরিদপুরে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কে আজাদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে কয়েক দিন ধরে চলা আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল রাতে বিক্ষোভ ও মশালমিছিল করেছেন বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের লোকজন। এ কে আজাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্থানীয় মহিম স্কুলের মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। মহানগর বিএনপির ১২ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইসমাইল হোসেন লাবলু। বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গী, সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রশিদ বাচ্চু, ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, ১২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিপু শেখ, ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিদ প্রমুখ। বক্তারা এ কে আজাদকে ফরিদপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বলেন, তাকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। আওয়ামী লীগের দোসর এ কে আজাদকে ফরিদপুরের মাটিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই ‘জুতাপেটা’ করা হবে। বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ কে আজাদ আওয়ামী লীগের হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে ফরিদপুরকে অশান্ত করার চেষ্টা করছেন। এভাবে আর চলতে দেওয়া হবে না। এ কে আজাদসহ তার দোসরদের যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে। প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বক্তারা বলেন, এ কে আজাদ শুধু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরই নন, তিনি একজন লুটেরা। দেশের নিরীহ মানুষের জমি দখল থেকে শুরু করে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব কালো টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। সমাবেশে উপস্থিত লোকজন ‘এ কে আজাদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, এ কে আজাদকে গ্রেপ্তার করো, করতে হবে, খুনি হাসিনার দোসরদের আস্তানা ফরিদপুরে হবে না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। পরে একটি বিশাল মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি মহিম স্কুলের সামনে থেকে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাজরাতলা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সন্ধ্যা ৭টায় মহানগর যুবদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল হয়। বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলটি কমলাপুর তেতুলতলা থেকে বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মুজিব সড়ক, প্রেস ক্লাব, নিলটুলী হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজওয়ান বিশ্বাস তরুণের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনান, কৃষক দলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকী, যুবদল নেতা লুৎফর রহমানসহ নেতারা। বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর ও ডামি নির্বাচনের এমপি এ কে আজাদ সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন সময় ফরিদপুরে ঘুরে বেড়ালেও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এ কে আজাদ দম্ভোক্তি করে বলেন, তিনি নাকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করে সবকিছু ঠিক করে নিয়েছেন। তিনি ফরিদপুরে প্রকাশ্যে এমন ঘোষণা দিয়ে বলেন, আপনারা আমার সঙ্গে থাকেন, আমি সবকিছু ম্যানেজ করেই এসেছি। তার এ কথায় প্রমাণ হয়, এ কে আজাদ টাকা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সন্ত্রাসীদের নিয়ে বৈঠক করছেন। বক্তারা অবিলম্বে এ কে আজাদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসন এ কে আজাদকে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পুলিশ সুপারকে ফরিদপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
সভা থেকে বক্তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর এ কে আজাদ পুনরায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ফরিদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে ফরিদপুরে ও ঢাকায় বসে বৈঠক করছেন। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, সন্ত্রাসীদের গডফাদার এ কে আজাদকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হলে ফরিদপুরের জনগণ গণধোলাই দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করবে। এখনো সময় আছে এ কে আজাদকে গ্রেপ্তার করুন।