জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সার্কেলের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাশের সেদিনের আচরণ পূর্বপরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ধারণা করছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সেদিন এ প্রকৌশলীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ, উন্মত্ত আচরণে এখনো হতবাক মেয়র।
মেয়র বলেন, আমার মনে হয়, সে পরিকল্পিতভাবে কোনো এজেন্ডা নিয়ে এসেছিল। ভেবেছিল এধরনের আচরণ করলে আমি রাগ সংবরণ করতে পারবো না। অবশ্য সে সুযোগ তাকে আমি দিইনি। ‘বকাঝকা’ করে বিষয়টার ইতি টানতে চেয়েছি। কিন্তু পরে সে তিলকে তাল করলো। নিজের অপকর্ম ঢাকতে উল্টো আমার বিরুদ্ধে ‘থাপ্পড়’-এর অভিযোগ আনলো।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার কাছে সেদিনের বিষয়টি ফের খোলাসা করেন মেয়র। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সেদিন ৬ জন কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে জুনিয়র কর্মকর্তা উপ সহকারি প্রকৌশলীটি। আলোচনার শুরু থেকেই দেখা গেলো, তার উৎসাহ অন্যদের চেয়ে বেশি। সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে বারবার সে নিজেই হাত নেড়ে কথা বলছে, জবাব দিচ্ছে, ওর স্পর্ধা দেখে আমি তো অবাক!
‘কাজটা হচ্ছে জনস্বার্থে। ওর (পলাশ) ইনটেনশন কী? যেখানে সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এসেছে, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এসেছে; ও হচ্ছে সাব এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার। নরমালি যেখানে সিনিয়র অফিসাররা উপস্থিত, সেখানে তো ও কথা বলতে পারে না। ও কেন কথা বলতে গেলো। এখানে তার ইনটেনশন কী? আর কাঁচাবাজার বসানোর জন্য ওর এতো আগ্রহ কেন? আইন কি সেটা কাভার করে? হাউজিং সেটেলমেন্ট’র কাজ কি কাঁচাবাজার বসানো?’
মেয়র নাছির বলেন, সিটিতে কাঁচাবাজার অনুমোদন দেয়া এবং বসানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া বাজার বসাতে পারে না।
মেয়র বলেন, তাদের কোনো অনুমোদন নেই। তারা জাস্ট একটি আবেদন করেছে, তার ওপর ভিত্তি করে গত ৯-১০ বছর বাজার বসিয়ে রেখেছে। তাছাড়া এ জায়গাটা হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। জনপথ বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে রাস্তার জন্য। এরপর তারা হাউজিং সেটেলমেন্টকে হস্তান্তর করেছে রাস্তার জন্য। একই কারণে হাউজিং সেটেলমেন্ট সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেখানে ১২০ ফিট, হাবিজাবি এসব প্রশ্নই আসতে পারে না। কারণ এটা অধিগ্রহণ হয়েছে শুধু রাস্তার জন্য, এবং সেটা হুবহু হস্তান্তর হবে তা-ই স্বাভাবিক। এখানে একটা অনিয়ম, দুর্নীতি, দুরভিসন্ধি তো স্পষ্ট।
ওই ইঞ্জিনিয়ারের সেদিনকার ঔদ্ধত্যের আরো বর্ণনা দেন মেয়র। তিনি বলেন, আমি তাকে বললাম, ভালো কাজের ক্ষেত্রে জায়গা কার সেটা নয়। জলাবদ্ধতায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদগ্রীব। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ড্রেন কখনো ৫০ ফিট বাঁকা করে নিয়ে যাওয়া যায়? তাহলে তো যেখানে ড্রেন এসে থেমে গেছে সেখানে বারি খেয়ে পানি রাস্তায় চলে আসবে। তখন তো সিটি করপোরেশনকে মানুষ ধুয়ে ফেলবে। বলবে এটা কোন ইঞ্জিনিয়ার করছে, সে কি পড়ালেখা জানে? জনস্বার্থে সোজা ড্রেন করছি অনেকদিন। এতদিন পর আপনারা জায়গার মালিকানা দাবি করতে আসলেন। এধরনের ড্রেন হয় কোনোদিন, আপনারা দেখেছেন বা শুনেছেন।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমি জানি যে বাজারটা অবৈধ। কিন্তু সেখানে যে তারা (হাউজিং) ইনভলব সেটা আবিষ্কার করি পরে। আমি বললাম, জায়গা যদি আপনাদের হয়ে থাকে, সেখানে এতদিন অবৈধ বাজার চলে আসছে, আপনাদের কোনো পদক্ষেপ ছিল না কেন? আমিই বাজারটা উচ্ছেদ করেছি। সে (পলাশ) আমাকে রিপ্লাই দিচ্ছে কীভাবে দেখুন।
‘সে বললো, সিটি করপোরেশনের অনেক জায়গা বেদখলে আছে। আমি বললাম, সিটি করপোরেশনের কোনো জায়গা বেদখলে নাই। তখন সে পাল্টা জবাব দেয় এবং আমাকে প্রশ্ন করে, সিটি করপোরেশনের ফুটপাথ হকাররা দখল করে আছে, আপনি কি কিছু করতে পারছেন? সে কথাগুলো বলছে হাত নেড়ে নেড়ে। আমি মেয়র বলে ছেড়ে দিয়েছি, এ আচরণ একজন সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে করলেও তাকে ছাড়তো না।’ যোগ করেন মেয়র।
এদিকে, মেয়রের সঙ্গে ওই প্রকৌশলীর অশোভন আচরণের প্রতিবাদে ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমে আসে। লাগাতার প্রতিবাদসভা, সমাবেশ, মানবন্ধনে বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম।
একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফুঁসে উঠা মানুষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এক বিবৃতিতে এ নিয়ে আর কোনো কর্মসূচি না দেয়ার জন্যও শুভানুধ্যায়ীদের অনুরোধ জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘আমি নগরের ৬০ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধি। এ ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই নগরবাসী ক্ষুব্ধ, তারা কষ্ট পেয়েছেন। এ কারণে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন। এখানে আমার কোনো হাত নেই। পরে যখন বুঝলাম, বিষয়টি বড় হয়ে যাচ্ছে, তখনই আমি নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছি আন্দোলন থেকে সরে আসতে।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল