সরকার আশ্বিনের পূর্ণিমার চারদিন আগে এবং পূর্ণিমার পর (৯ থেকে ৩০ অক্টোবর) পর্যন্ত ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনায় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে এ সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, স্বদ্বীপ, বাঁশখালী ও আনোয়ারাসহ আশপাশের এলাকার জেলে ও মাছ ধরার ট্রলারগুলো অলস বসে আছে। তাছাড়া ফিশারিঘাট সংলগ্ন বাজারে নৌকা ও ট্রলারের জ্বালানি তেলের অধিকাংশ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। মাছের আড়তগুলোকেও ইলিশ সংগ্রহ না করতে অবহিত করা হয়েছে।
মৎস্য বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, ইলিশের মূল উৎপাদন কেন্দ্র ছয়টি অভয়াশ্রমের দুটি হচ্ছে- উত্তরপূর্বে মিরসরাই উপজেলার শাহেরখালী থেকে হাইতকান্দী, দক্ষিণপূর্বে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া-গণ্ডামারা পয়েন্ট।
প্রসঙ্গত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময়ে ইলিশের আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। এ আইন অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এমনকি উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ৮০ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে এই সময়েই। একটি বড় ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। যেসব জেলার জেলেরা মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল, তাদের খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকাকালীন।
জেলা সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারঘোষিত ২২ দিনের এই অভয়াশ্রম কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স তৎপর রয়েছে। ইলিশ মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে নদীতে ২৪ ঘণ্টা কোস্ট গার্ড ও নৌ-পুলিশ টিমের অভিযান চলবে।’
ফিশারিঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ইলিশের মৌসুমে এবার সাগরে ইলিশ ধরা পড়েছে বেশি। পুরো ভাদ্র মাস জুড়েই ইলিশ এসেছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন সাগরমুখী ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই মাছ আহরণ, পরিবহনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।’
ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি নূর হোসেন বলেন, ‘উত্তাল সমুদ্র দাপিয়ে বেড়ানো মাছ ধরার ট্রলারগুলো এখন অলস বসে আছে কর্ণফুলীর দু’পাড়ে। পুরনো যন্ত্রাংশ সংস্কার, জাল মেরামতের পাশাপাশি নদীর তীরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে জেলেরা।’
জানা যায়, এর আগে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকার সময়ে সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, সন্দ্বীপ, বাঁশখালী ও আনোয়ারা এলাকার ২৪ হাজার ৪টি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডের প্রায় ৫ হাজার জেলে পরিবার চাল গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। নগরের উত্তর কাট্টলী থেকে মোহরা এলাকার প্রায় আড়াই হাজার জেলে পরিবার ও কর্ণফুলী উপজেলার দেড় হাজার জেলে পরিবারও এর আগে কোনো সহায়তা পায়নি।
জেলা সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাজিম উদ্দিন বলেন, সাধারণত তালিকাভুক্ত জেলেরাই অগ্রাধিকার পায়। তালিকায় যাদের নাম থাকে না, তারা বরাদ্দ পায় না।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছরই এই সময় জেলেদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার। জাটকা নিধন বন্ধ হওয়ায় দেশে প্রতিবছরই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরেই ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৫ লাখ টনের আশেপাশে থাকছে। মৎস্য অধিদফতরের দাবি, গত ১০ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম