চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনার সংক্রমণ নিয়ে রোগী ভর্তি বেড়েই চলেছে। কোনো হাসপাতালেই খালি নেই আইসিইউ-এইচডিইউ সিট। হাসপাতালগুলোর বাইরেও দেখা যাচ্ছে অক্সিজেন লাগিয়ে রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দিশেহারা স্বজনরা অসহায়ের মতো নিজেদের রোগীর চিকিৎসা সেবা নিতে আকুতি-মিনতি এবং চোখের পানিও রীতিমতো জ্বল জ্বল করছে। তবে চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে কিছুটা করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু সংখ্যা কমে এসেছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে শনাক্ত হয়েছে ৯২৮ জন। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া করোনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২ হাজার ৭২৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২৮ জন। এদের মধ্যে নগরীতে ৫৬৩ জন এবং বিভিন্ন উপজেলায় ৩৬৫ জন। এছাড়া করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জন। এদের মধ্যে ৫ জন উপজেলায় এবং ৩ জন নগরীর। তবে রোগী বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউসহ বিভিন্ন কিছু সংকট থাকলেও করোনা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সকলেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
লোকমান নামে একজন কাতালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা বলেন, আমার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। বর্তমানে অক্সিজেন লেভেল ৭০ এর উপরে। কোথাও কোনো হাসপাতালে আইসিইউ সিট খালি পাচ্ছি না। একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তির চেষ্টা চলছে। সরকারি হাসপাতালেও সিট খালি নেই। এরই মধ্যে আমার আরেক নিকট আত্মীয়ও করোনায় আক্রান্ত। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। তবে যেমনি সিট খালি নেই, ঠিক তেমনি আর্থিক সংকেটও পড়েছি। একই অবস্থা শত শত করোনা রোগীর স্বজনদেরও বলে জানান অন্যরা।
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক্সিকিউটিভ কমিটির (ইসি) সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, কোভিড-১৯ প্যানডেমিক পরিস্থিতির শুরু থেকেই চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সেন্ট্রাল অক্সিজেন, বায়প্যাপ মেশিন, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, হাই ফ্লোন্যাজাল ক্যানোলা (এইচএফএনসি) ও চিকিৎসক, নার্স ও সাপোর্টিং স্টাফের সমন্বয়ে একটি ডেডিকেটেড টিমের মাধ্যমে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিট খালি না থাকায় প্রায় ১০-১২ জন রোগী ভর্তি করতে পারছি না। বর্তমানে কোভিড-১৯ ইউনিটে রোগী ভর্তি আছেন ৯০ জনের উপরে। এইচডিইউ ও আইসিউ ৬টি বেডই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী দ্বারা পরিপূর্ণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি গত ২৪ ঘণ্টাসহ এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে শনাক্তের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৫৮৮ জন। এদের মধ্যে নগরীতে ৬৬ হাজার ৩৭৫ জন এবং ২৩ হাজার ২১৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪৪ জন। এদের মধ্যে ৬১১ জন নগরীর এবং ৪৩৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। তাছাড়া উপজেলায় শনাক্ত ৩৬৫ জনের মধ্যে হাটহাজারী উপজেলাতেই শনাক্ত হয় ৯৯ জন রোগী রয়েছে। এছাড়া রাউজানে ৬৮ জন, বোয়ালখালীতে ৬০ জন, ফটিকছড়িতে ৩৮ জন, পটিয়ায় ৩০ জন, বাঁশখালীতে ১০ জন, আনোয়ারায় ৭ জন, সাতকানিয়ায় ৬ জন, চন্দনাইশে ৫ জন, মিরসরাইয়ে ৪ জন, লোহাগাড়া ও রাঙ্গুনিয়ায় ২ জন করে এবং সন্দ্বীপে ১ জন করোনা পজিটিভ রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন