চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু এর আগেই ভোটের মাঠে নানা কৌশলে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থী। অভিনন্দনবার্তা, শুভেচ্ছা বিনিময়, দলীয় কর্মসূচি ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানের আড়ালে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। কর্মী সমর্থকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন।
নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চালাতে পারেন না। তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি কিংবা সংস্থাও প্রচার চালাতে পারবে না। কেউ যদি এই ধরণের প্রচারণা চালায় এবং সেটা ভোটের প্রচার হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে যে কোনো প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি দিতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের এমপি ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর এই শূণ্য আসনে আগামী ৩০ জুলাই উপনির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই শেষ করেছে ইসি। মনোনয়ন দাখিল করা ছয়জনের মধ্যে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে আছেন। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চার প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত, জাতীয় পার্টির মো. সামসুল আলম ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশীদ মিয়া। এসব প্রার্থীদের কেউ চাইলে আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার সুযোগ পাবেন। বৃহস্পতিবার চার প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দিবে ইসি। এরপর থেকে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চালাতে পারবেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, একাধিক প্রার্থী নানা কৌশলে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। এমনকি এসব প্রচারণায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। ইসির পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর থেকে প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা অভিনন্দনবার্তা প্রচার, ঘরোয়া বৈঠক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভোট চাইছেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পরও একাধিক প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের শোডাউন দিতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে সকল ধরণের প্রচারণা নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসি’র আরেক কর্মকর্তা বলেন, মূলত চার প্রার্থী চারটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করায় তাদের দলীয় প্রতীক অনেকটাই নিশ্চিত। সেকারণে তারা এই ধরণের কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে বেশকিছু দলীয় সভা ও বিভিন্ন সংস্থার সভায় অংশ নিয়েছেন। গত শনিবার লালখান বাজারে চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওতাভুক্ত ওয়ার্ড ও ইউনিটগুলোর সাথে মতবিনিময় করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি এবং মহিউদ্দিন বাচ্চুও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও নগর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক কয়েকটি সংস্থার সাথেও সভা করেছেন বাচ্চু।
এসব সভায় বাচ্চুকে বিজয়ী করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ঠিক করার পাশাপাশি ভোটারদের কাছে কিভাবে ভোট চাইতে হবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাচ্চুর জন্য ভোট চাইছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে জানতে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে ফোন করলে তিসি রিসিভ করেননি।
বাচ্চু’র মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য প্রার্থীরাও নানা কৌশলে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। যদিও তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী দীপক কুমার পালিতের দাবি, তিনি ইসির নির্দেশনার বাইরে কিছু করছেন না। নেতাকর্মীদের সাথে রুটিন সাক্ষাত ছাড়া আর কিছু করছেন না তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সামসুল আলম বলেন, ‘কোনোভাবে যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয় সে ব্যাপারে আমি ও আমার দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক।’ ইসির নির্দেশনার কারণে দলের সভা সমাবেশ থেকেও তিনি আপাতত দূরে আছেন বলে জানান।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল