মুক্তির স্বাদ নেওয়ার জন্য এখন তিন মামলার জামিনের অপেক্ষায় রয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদা। ঢাকার কেরানিগঞ্জের কারাগারে বসে তাই প্রতীক্ষার প্রহর গোনা চলছে। ঘনিষ্ঠ মহলে সাংবাদিক নাজমুল জানিয়ে রেখেছেন, যদি এই তিন মামলায় জামিন মেলে তবে জেল থেকে বেরিয়েই ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় মুখ খুলবেন। পরিবার সূত্রের খবর, কারাগারে ভাল নেই অসুস্থ নাজমুল হুদা। সকালে পুরনো আটার আধাপোড়া একটি রুটি ও ছোট এক টুকরা গুঁড় জোটে ভাগ্যে। দুপুরে নিম্নমানের গন্ধযুক্ত চালের ভাত, সামান্য আলু ভর্তা ও বুড়ো লাউয়ের ঝোল এবং রাতে ভাতের সঙ্গে সামান্য ডাল ও ভাজি দেওয়া হয়। এ ছাড়া মাঝে-মধ্যে দেওয়া হয় মাছ-মাংসের খুবই ছোট টুকরা। রান্নায় লবণ পর্যন্ত ঠিক মতো দেওয়া হয় না।
এদিকে সাংবাদিক নাজমুলের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, ঢাকার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকার শ্রমিক আন্দোলনে উসকানির ঘটনায় মামলার করার কথা শিল্পাঞ্চল পুলিশের। কিন্তু তা না করে মামলা করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। তাই এই মামলার পেছনে আশুলিয়া থানা পুলিশের আলাদা উদ্দেশ্যে রয়েছে। তাছাড়া ঘটনা ২০ তারিখ দেখালেও মামলা করেছে ২৪ তারিখে। মামলার অভিযোগে এই বিলম্বের বিষয়ে কোনো বক্তব্য উল্লেখ নেই। এছাড়া অনলাইনের কোন ঠিকানায় সাংবাদিক নাজমুল হুদা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আইনের আপরাধ করেছে, সেই ঠিকানাও এজাহারে উল্লেখ করেনি পুলিশ। এছাড়া ঢাকার আশুলিয়া থানায় গত বছরের করা প্যান্ট চুরির মামলাসহ আরো ৫টি পৃথক মামলায় সন্দেহ করে সাংবাদিক নাজমুলকে আসামি বানিয়েছে পুলিশ। অথচ এ সকল মামলার বাদীরা সাংবাদিক নাজমুলকে এজাহারে আসমি করেনি। এছাড়া অভিযোগের কোথাও সন্দেহের তালিকাতেও রাখেননি। তবুও আশুলিয়া পুলিশের সন্দেহ হয় সাংবাদিক নাজমুল ওই প্যান্ট চুরিসহ ৫ মামলার ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। আসলে এ সকল মামলায় যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা যে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করেছে, সেই সংবাদের কারণে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হয়নি। যা ঘটনা শুধু সেটুকুই প্রচার করা হয়েছে। সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী ওই সংবাদে পুলিশ, বিজিএমইএ নোতাসহ নানা তরফের বক্তব্য যুক্ত রয়েছে। আসলে পূর্বের শত্রুতার কারনে অসাধু ব্যক্তিদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য শ্রমিক উস্কানির অজুহাত দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এ সকল মামলায় আসামি বানিয়েছে। এসকল মামলার মধ্যে ঢাকার আশুলিয়া থানার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযু্িক্ত আইনে করা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুই মামলাসহ মোট তিন মামলায় জামিন পেয়েছেন। এখনো জামিনের অপেক্ষ আরো তিনটি মামলা রয়েছে। এই তিন মামলায় যত দিনে জামিন না পাবে ততো দিন বিনা বিচারে সাংবাদিক নাজমুলকে থাকতে হবে কারাগারে।
আদালত সূত্র জানান, ঢাকার আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন (রিপোর্ট) করায় বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদাকে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনেরসহ ৬টি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের নিষেধ অমান্য করে সংবাদ প্রচার করায় আক্রোশের শিকার হয়ে নাজমুল এখন কারাগারে আছেন।
এরআগে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশ বাদী হয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করে। এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরে গত বছরের করা ঢাকার আশুলিয়া থানার প্যান্ট চুরির মামলাসহ আরো ৫টি পৃথক মামলায় পুলিশ গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে আদালতে।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব