টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বিধবা রসিয়া বেওয়ার বসতবাড়ি দখল করতে আব্দুল কাদেরের করা 'মিথ্যা' মামলায় গ্রেফতার আতঙ্ক বন্ধ হচ্ছে না। 'মিথ্যা' মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে নিরীহ পরিবারের দিনমুজুর সদস্যরা এক বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এক বছর আগে টাঙ্গাইল আদালতে করা মামলায় প্রথমে মির্জাপুর থানা ও পরে ডিবি পুলিশ তদন্ত করে। দুই সংস্থার তদন্তে মামলাটি মিথ্যা হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়। বাদীর নারাজিতে বর্তমানে সিআইডি মামলার তদন্ত করছে।
মির্জাপুর পৌরসভার বাওয়ার কুমারজানী মৌজার মির্জাপুর মহিলা কলেজের পূর্বপাশে ৪৩৮ নং দাগে সরকারি খাস জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিহীন বিধবা রসিয়া বেওয়া ছেলে, বৌ, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি নিয়ে বসবাস করছেন। মির্জাপুর থানা রোডের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের লোকেরা ভূমিহীন ওই পরিবারের একমাত্র আশ্রয়টি দখলে নিতে দীর্ঘ সময় ধরে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রথমে ভয় দেখিয়ে একাধিকবার বসতবাড়িটি দখলের চেষ্টা চালানো হয়। সেটা ব্যর্থ হলে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিধবা রসিয়া বেওয়ার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আসামী করা হয় বিধবার ছেলে দিনমুজুর হান্নান বেপারী, মেয়ের জামাই শফিক বেপারী ও বোনের ছেলে জাহাঙ্গীর বেপারীকে। নামে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ এনে ওই মামলা করা হয়।
আদালত মামলাটি মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নথিভুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে থানায় ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। মির্জাপুর থানা উপ-পরিদর্শক আলমগীর কবির মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তকারী কর্মকর্তার গ্রেফতারের ভয়ে নিরীহ পরিবারের সদস্যরা বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়ান। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক ওই বছরের ৪ এপ্রিল মামলাটি মিথ্যা হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন দেন।
বাদী আব্দুল কাদের এসআই আলমগীর কবিরের দেয়া প্রতিবেদনের উপর নারাজি দিয়ে মামলাটি ডিবি পুলিশকে দিয়ে আবার তদন্তে আবেদন জানান।
আদালত মামলাটি আবারও ডিবি পুলিশকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান আবার তদন্ত করেন। ডিবির তদন্তের সময় গ্রেফতারের ভয়ে দিনমুজুর নিরীহ পরিবারের সদস্যরা কাজকর্ম ফেলে দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়ায়। পরে ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই বছরের ২ অক্টোবর মামলাটি মিথ্যা হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়।
ডিবির দেয়া প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী আব্দুল কাদের আদালতে তৃতীয়বারের মতো নারাজি দিয়ে মামলাটি সিআইডির তদন্তের জন্য আবেদন জানান।
আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে টাঙ্গাইল সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। টাঙ্গাইল সিআইডি অফিসের উপ-পরিদর্শক মোখছেদুল আলম তদন্ত শুরু করলে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রেফতার এড়াতে বিধবা রসিয়ার পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
মামলায় বিভিন্ন সময় তদন্তের হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয়ে গত এক বছর ধরে দিনমুজুর পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়ানোয় পরিবারটি ঋণগ্রস্থ হয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছে বলে জানা গেছে।
বিধবা রসিয়া বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মানুষের বাসা বাড়িতে সারাদিন কাজ করে রাতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে ওই বাড়িতে শান্তিতে একটু ঘুমাই। কিন্ত আব্দুল কাদের মিথ্যা মামলায় সেটাও কেড়ে নিতে চাচ্ছে।
মামলাটি সিআইডির টাঙ্গাইল জেলার প্রধান কর্মকর্তাকে সরেজমিনে তদন্তের দাবি জানান বিধবা রসিয়া বেওয়া।
টাঙ্গাইল জেলা সিআইডি কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা এএসপি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মামলাটি এর আগেও দুইটি সংস্থা তদন্ত করেছে। সে কারণে তিনি নিজে তদন্ত করে সত্য উদঘাটনের পর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
বিডি প্রতিদিন/৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা