দীর্ঘ ৪০ বছর পর বাবাকে খুঁজে পেয়েছেন মো. শাহিদুল ইসলাম। শাহিদুলের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেতকাশী গ্রামে। শাহিদুলের জন্মের কয়েক মাস পরই নিখোঁজ হন তাঁর বাবা মো. রুহুল আমিন গাজী। জন্মের পর থেকে কখনও নিজের জন্মদাতা পিতাকে বাবা বলে ডাকার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। অবশেষে খোঁজ পেয়ে মঙ্গলবার কুমিল্লার লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজারে এসে বাবাকে কাছে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ৪০ বছর ধরে কুমিল্লার লাকসামের বিভিন্ন হাট-বাজার ও পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন রুহুল আমিন গাজী নামের ওই ব্যক্তি। প্রতিদিন নামাজ, রোজা আর মানুষের দানে চলছিল তার জীবনযাত্রা। তবে কারো সঙ্গে তাঁর তেমন কথা হতো না। নিজের মত করে ঘুরে ফিরে কখনো মসজিদ, কখনো মোক্তব, আবার কখনো রেলস্টেশন, স্কুল কলেজের বারান্দায় ও খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে পার করেছেন জীবনের ৪০টি বছর। তবে বয়সের ভারে এখন অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি লাকসাম পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারে রুহুল আমিন গাজীর সঙ্গে দেখা হয় উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের দামবাহার গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। কথা বলতে না চাইলেও চাচা সম্বোধন করে মিজানুর রহমান অসুস্থ্য ওই বৃদ্ধের খোঁজ-খবর নেন। পরে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপকালে নিজ পরিচয় জানতে চাইলে এক পর্যায়ে ওই বৃদ্ধ ব্যক্তি জানান, তাঁর বাড়ি খুলনা জেলার কয়রা থানার উত্তর বেতকাশী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কোটা গাজীর ছেলে। তাঁর নাম মো. রুহুল আমিন গাজী। গত ৪০ বছর আগে ভারতের আজমীর শরীফ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি সিলেটের হযরত শাহজালাল (রা.) এর মাজারে চলে যান। পরে সেখান থেকে রওনা হন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও তিনি পথিমধ্যে কুমিল্লার লাকসামে নেমে পড়েন। সেই থেকে লাকসামে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৪০টি বছর।
ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, ''ওই বৃদ্ধের নাম ঠিকানা জানতে পেরে আমি ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করি খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আজগর হোসেন সাব্বিরের সঙ্গে। আজগর হোসেন সাব্বির কয়রা থানা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব গাজী আবদুস ছামাদকে বৃদ্ধের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে রুহুল আমিন গাজীর সন্ধানের খবর স্বজনদের জানালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে ওই বৃদ্ধের স্বজনরা তার সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার খুলনা থেকে ওই বৃদ্ধের ছোট ছেলে শাহিদুল ইসলামসহ স্বজনরা এসে লাকসাম বাজারে আমার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান থেকে রুহুল আমিন গাজীকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন।''
রুহুল আমিন গাজীর ছেলে শাহিদুল ইসলাম বলেন, ''আমরা ৩ ভাই ও ২ বোন। এর মধ্যে মেজ ভাই মারা গেছেন। আর বড় ভাই নুরুল ইসলাম মানসিক রোগী। আমার মা এখনো জীবিত আছেন।''
তিনি বলেন, ''জন্মের পর বাবাকে হারিয়েছি। নিজের জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর থেকে কত জায়গায় বাবাকে খুঁজেছি তার কোনো হিসাব নেই। অবশেষে আল্লাহর রহমত ও লাকসামের মানুষের সহযোগিতায় দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়েছি। বাবা বলে ডাকতে পেরেছি। বাবাকে কাছে পেয়ে আজ আমি সত্যি অনেক আনন্দিত।''
বিডি-প্রতিদিন/৩০ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব