বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ ব্রিজ এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেলে দুই কলেজ শিক্ষার্থীকে বেতের লাঠি দিয়ে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিকেলে ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. তারেকের বেতের লাঠির আঘাতে আহত সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের এইচএসসি’র ছাত্র জাকারিয়া জিহাদ ও তার সহপাঠী কথা গুরুতর আহত হয়। জিহাদের ডান হাত ভেঙ্গে ও পা মচকে গেছে এবং কথার মুখমন্ডল ফুলে উঠেছে। আহতদের শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা সার্জেন্ট তারেককে ঘেরাও করে মারধর করতে উদ্যত হলে সে পালিয়ে রক্ষা পায়।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. নাজমুল জানান, জিহাদ তার সহপাঠী কথাকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে নথুল্লাবাদব্রীজ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের চেকপোষ্ট অতিক্রমকালে সার্জেন্ট তারেক তাদের থামার জন্য সংকেত দেন। ওই সময় বিপরীত দিক থেকে একটি পিকাপ আসায় জিহাদ মোটরসাইকেলের গতি কমিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার মুহূর্তে সার্জেন্ট তারেক বেতের লাঠি দিয়ে মোটরসাইকেলের পিছনে বসা কথার উপর আঘাত হানে। লাঠির আঘাত কথার কানের উপর লাগে। সাথে সাথে সার্জেন্ট তারেক আবার জিহাদকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে মোটরসাইকেলসহ ওই দুই আরোহী মহাসড়কের পাশের ডিভাইডারের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুইজন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা ঝাড়ু, জুতা এবং লাঠি নিয়ে সার্জেন্ট তারেকসহ ওই স্থানে থাকা পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে সার্জেন্ট তারেককে মারধর করতে উদ্যত হয় তারা। এ সময় পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন সার্জেন্ট তারেক। খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই দুই শিক্ষার্থীর অবস্থা আশংকাজন হওয়ায় তাদের দ্রুত শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, জিহাদের ডান পা ভেঙ্গে গেছে এবং শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। কথার কানের উপর লাঠির আঘাত লাগায় সমস্ত মুখমুন্ডল ফুলে উঠেছে।
শেরে-ই মেডিকেলে চিকিৎসাধীন জিহাদ জানান, মোটরসাইকেলের সকল কাগজপত্র তার সাথে রয়েছে। যে সময় তাকে থামার জন্য সংকেত দেয়া হয় সেই সময় বিপরীতগামী একটি গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে তার সামনে অগ্রসর হওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। ওই সময় সার্জেন্ট তারেক তাকে ও তার সহপাঠীর উপর বেতের লাঠি গিয়ে আঘাত হানলে তারা দুর্ঘটনাকবলিত হন। তিনি এই ঘটনার তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
এদিকে ওই ঘটনার পরপরই বরিশাল মেট্রো পুলিশের ট্রাফিক উপ-কমিশনার উত্তম কুমার পাল কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে ফোন করে এ সংক্রান্ত সংবাদ না ছাপানোর অনুরোধ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন জিহাদ ও কথাকে দেখতে যান উত্তম কুমার পাল।
উত্তম কুমার পাল স্বীকার করেন, সার্জেন্ট তারেক আইন বহির্ভূত কাজ করেছে। এ কারণে সার্জেন্ট তারেককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান উত্তম কুমার পাল।
বিডি প্রতিদিন/১ জুন ২০১৮/হিমেল