দীর্ঘ ১০ বছর পর বরিশাল নদী বন্দরে নোঙ্গর করেছে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সমুদ্রগামী যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি তাজউদ্দিন আহমেদ। আবারও নিয়মিত রুট চালুর অংশ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে শুক্রবার ভোর ৫টায় বরিশাল বিআইডব্লিটিসি ঘাটে নোঙ্গর করে জাহাজটি। তবে পরীক্ষামূলক যাত্রায় হোচট খেয়েছে জাহাজটি। প্রায় পৌঁনে ৩শ’ কিলোমিটার উপকূলীয় নৌপথ পাড়ি দিয়ে বরিশালে পৌঁছাতে ১২ ঘণ্টার স্থলে জাহাজটির সময় লেগেছে ২০ ঘণ্টা।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জাহাজটি। শুক্রবার ভোর ৫ টায় জাহাজটি বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করে। ঘণ্টায় ১৮.৫২ কিলোমিটার গতিবেগ সম্পন্ন জাহাজটি ১২ ঘণ্টায় প্রায় পৌঁনে ৩শ কিলোমিটার উপকূলীয় নৌপথ পাড়ি দিয়ে বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছার কথা থাকলেও এটি বরিশালে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ২০ ঘণ্টা।
পথিমধ্যে হাতিয়ায় এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি এবং ভোলার ইলিশার চর গজারিয়া সংলগ্ন মেঘনায় নাব্যতা সংকটের কারণে দুই দফায় প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা নোঙ্গর করে ছিলো জাহাজটি। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জাহাজটি ফের বরিশাল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করার কথা।
প্রায় ১৯৭ ফুট দৈর্ঘ ও ৩৯.৩৬ ফুট প্রস্থ বিশিস্ট নৌযানটিতে বিআইডব্লিউটিসি এবং বিঅইডব্লিউটিএ’র বাণিজ্য, মেরিন ও প্রকৌশল শাখার বেশ কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন।
পরীক্ষামূলক এই ট্রিপের ফলাফল বিশ্লেষণসহ সব কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় যাত্রীবাহী সার্ভিসটির সময়সূচি ও যাত্রী ভাড়া নির্ধারন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সার্ভিসটি কবে থেকে নিয়মিত বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বাণিজ্যিক সেবা শুরু করবে সে সম্পর্কে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে চলতি মাসের মধ্যেই সার্ভিসটি যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধান।
১৯৬৪ সালে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মানী থেকে সংগ্রহ করা ৪টি নৌযানের সাহায্যে বরিশাল-নারায়গঞ্জ-চট্টগ্রাম ও বরিশাল-হাতিয়া-স্বদ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে উপকূলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করে। ওইসব নৌযানের মধ্যে ‘এমভি মনিরুল হক’ ও ‘এমভি আবদুল মতিন’ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পূনর্বাসনও করা হয়। কিন্তু ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ওইসব নৌযান সার্ভিসটি বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। ২০১১ সালের মধ্যভাগে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপকূলীয় নৌযোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতে ৭শ’ ও ৫শ’ যাত্রী ধারন ক্ষমতায় দুটি উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহের লক্ষে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিপিপি একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এক বছর পর ৭শ’ যাত্রী বহনক্ষম উপকূলীয় নৌযান এমভি তাজউদ্দিন আহমদ নির্মাণের লক্ষে বিআইডব্লিউটিসি’র সাথে ‘থ্রি এ্যাংগেল মেরিন লিমিটেড এন্ড দি কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড জেভি’র সাথে ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ২০ মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তিন দফায় ৪ বছর সময় বাড়িয়ে ৬৮ মাস পরে গত এপ্রিলে নৌযানটি হস্তান্তর করা হয়। গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ নামে এই জাহাজটির আনুষ্ঠনিক উদ্বোধন করেন।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় নৌযানটি ৬০৬ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করে। নৌযানের দীর্ঘ সময়ের ভ্রমনকে যাত্রীরা ‘যথেষ্ট বিরক্তিকর, বিব্রতকর ও দুর্ভোগের নৌ ভ্রমণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
নৌযাটিতে ভ্রমনরত বিআইডব্লিটিসি’র ডিজিএম গোপাল মজুমদার বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা সব কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে। তবে এই সার্ভিসটি নিয়মিত করতে নৌ পথের নাব্যতা বৃদ্ধি এবং নৌ সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল