বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্বে থাকছেন না উমামা ফাতেমা। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। পোস্টে উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব একটি গ্রুপের হাতে জব্দ। সম্প্রতি প্ল্যাটফর্মটির কাউন্সিল, বিভিন্ন জায়গায় কমিটি দেওয়া এবং কার্যক্রমের বিষয়ে অভিযোগ আনেন। এসব কারণ দেখিয়ে অবশেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপের সম্মুখীন হওয়ার বিষয় সামনে আনেন। তিনি বলেন, দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এ ব্যানারটি স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত। তাই আমার ওপর অনলাইন, অফলাইনে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করা হয় যাতে আমি এই ব্যানার নিয়ে কাজ না করি।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, যে মানুষগুলার সঙ্গে আমি পাশে দাঁড়ায়ে মিটিং করছি, মিছিল করছি তারাই পরিকল্পিতভাবে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার (Smear campaign) চালায়। এই সো কল্ড সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে, প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও লাগে না। এই ব্যানারের সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক ছিন্ন করি- গত এপ্রিল-মে মাসে। সুবিধাবাদীরা সব দখলে নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পোকার মতো ভিতর থেকে প্ল্যাটফর্মকে সুবিধাবাদীরা খেয়ে ফেলেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় ইভেন্ট দেখার পর চোখের সামনে সবকিছু ভেঙে পড়তে দেখাটা অনেক অনেক কঠিন। পরবর্তীতে আমার বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই ব্যানার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
বিভিন্ন স্থানে প্ল্যাটফর্মের নাম দিয়ে বিতর্কিত কমিটি ও কার্যক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ উমামা ফাতেমার। তার ভাষ্য, জেলা, উপজেলার অনিয়মের খবর আসত শুধু, সাংবাদিকদের কল আসত। এই কমিটিগুলো করার সময় আমার কাছে কমপ্লেইন এলে তো সরাসরি আমি অবজেকশনগুলো জানিয়েছি সাবেক আহ্বায়ক, সদস্যসচিবের কাছে। এনসিপি গঠনের আগে ঢালাওভাবে কমিটি ফর্ম হয়েছে। আমিসহ কয়েকজন এসব কমিটি নিয়ে অবজেকশন দিই। কোনো উত্তর আমাদের দেওয়া হয়নি।
একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুখপাত্র হিসেবে বৈষম্যবিরোধীর পেজের এক্সেস দেওয়া তো দূরের কথা এই পেজ থেকে মার্চ মাসে আমার বিরুদ্ধে পর্যন্ত পোস্ট করা হয়েছে। আমি ব্যবস্থা নিতে চাইলে পেজকে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর নইলে নীরব যন্ত্রণা (Silent treatment) সহ্য করতে হয়। দিনের পর দিন হেন কোনো নোংরামি নাই যা এরা করেনি। জুলাই এর পরে এই পরিস্থিতিগুলো ডিল করতে গিয়ে মার্চ, এপ্রিল মাসে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাই।
নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতেই সব দখল ছিল অভিযোগ করে উমামা লিখেছেন, আমি কাজ করতে চাইলে আমাকে করতে দেবে না। বরং পেছনে কথা ছড়ানো হতো আমি প্ল্যাটফর্মের কাউকে কাজ করতে দিচ্ছি না, কাউন্সিল আটকে রেখেছি। নেতারা তাদের জুনিয়রদের দিয়ে প্রপাগান্ডা সার্কুলেট করে বিভিন্ন ফোরামে। অথচ সবাই জানে কাউন্সিল মন্ত্রীপাড়ায় আটকে আছে। যখন হেয়ার রোড থেকে আহ্বায়ক সিলেক্ট হলো তখন নির্বাচন হতে ২০ দিনও লাগেনি। রাতেরবেলা ফলাফলের পর দেখলাম নির্বাচনে অংশ না নেওয়া একজন এসে মেম্বার হয়ে গেছে কাউন্সিলের। এসব দেখে আমি অত্যন্ত লজ্জিত। সেই একই স্বেচ্ছাচারিতা, স্ট্যান্ডবাজি, ভাই-ব্রাদার কোরামের খেলা। এখন বোধ করি এই প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
অভ্যুত্থানকে পুঁজি করে জনতার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমি অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে রক্ষার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে গিয়েছিলাম। প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবে যাওয়ার পরেই টের পাই সংস্কার, জুলাই, শহীদ, আহত এসব মুখের বুলিমাত্র। শুধু আমি না, অনেক ছাত্রই পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সবার সঙ্গে শুধু ছলনা হয়েছে। যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমার সঙ্গে নোংরামি করেছে এতগুলা মাস, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে তাদের আমি কখনো ক্ষমা করব না। আমি রুহের ভিতর থেকে বদদোয়া দিচ্ছি এই মোনাফেকদের।