মালিবাগ টু কুড়িল বিশ্বরোড। যে সড়কে প্রতিদিনই যুদ্ধ করতে হয় যাত্রীদের। তবু যেন দেখার কেউ নেই। রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কে বছরের পর বছর ধরে চলছে সীমাহীন ভোগান্তি। চরম দুর্ভোগে অসহায় এ সড়ক ব্যবহারকারীরা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ব্যবহার করে থাকে। অন্যান্য সড়কে দিনের বেলায় দীর্ঘ যানজট হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। কিন্তু মালিবাগ-কুড়িল বিশ্বরোডে দেখা যায় দিনের বেলা তো যানজট থাকেই; সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। সড়কের দুই পাশজুড়ে মূল রাস্তার ওপর বসেছে হাজারখানেক ভাসমান দোকানপাট। ফলে সড়ক হয়ে পড়েছে সরু। গণপরিবহনে নৈরাজ্য তো পরিবহনশ্রমিকরা ঐতিহ্য বানিয়ে ফেলেছেন। দেখা যায় সড়কের যত্রতত্র পেছনের বাস আটকে দেওয়ার জন্য চালক আড়াআড়িভাবে তার বাসটি রেখে যাত্রী সন্ধান করছেন। এর ফলে সৃষ্ট ১ কিলোমিটার জ্যামে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেসের যাত্রী জানেনও না কেন তিনি আটকে আছেন। মৌচাক থেকে কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে কিছুক্ষণ পর পরই এমন দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা।
মগবাজারের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাজিপাড়া পেট্রোলপাম্পের সামনে থেকে মালিবাগ আবুল হোটেলের মোড় পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা, খানাখন্দ। আবার রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল-বাড্ডা পর্যন্ত সারা বছরই চলে বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি। এখানে আগের দিন রাতে একরকম দেখলে পর দিন দেখি একই জায়গা আরেক রকম। একদিকে রামপুরা ব্রিজ থেকে একটু দক্ষিণে রামপুরা বাজার পার হলেই যানজট শুরু হয়। অন্যদিকে রামপুরা ব্রিজের উত্তর দিকে হাতিরঝিল ক্রসিংয়ের ওখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে মধ্যবাড্ডা লিঙ্ক রোড পর্যন্ত। এর সঙ্গে হাতিরঝিল থেকে গাড়ি এসে রামপুরার দিকে যাওয়ার ক্রসিংয়েও লাগে দীর্ঘ যানজট।’
ন্যাশনাল ব্যাংক পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র প্রভাষক স্নেহা রোজারিও বলেন, ‘জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য মৌচাক-মালিবাগ-ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। এর পরেও দুর্ভোগ কমেনি বরং বেড়েছে। অন্যদিকে মালিবাগ রেলগেট থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কটি বেহাল, ভাঙাচোরা, গভীর গর্ত রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় ধরে ওয়াসার পাইপ বসানো হয় সড়কের মাঝখানে। এরপর সংস্কার চলে ধীরগতিতে। মেরুল-বাড্ডা ও দক্ষিণ বাড্ডায় সড়কের দুই পাশে সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকে। রাত কিংবা সাতসকালেও যানজট থেকে রেহাই নেই। এমনকি ছুটির দিনেও এ রাস্তায় চলাচলে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।’ নতুনবাজার এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ বলেন, ‘এ রাস্তায় প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বাড়ছে। এরা না মানে কোনো নিয়ম, না মানে কাউকে। একটু পর পর দেখবেন সড়কের বিভিন্ন গলির মুখে ১৫ থেকে ২০টি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থেকে সড়কে মাত্র একটি বাস কোনোমতে যাওয়ার রাস্তা রেখেছে।’
প্রতিদিন দেখা যায় টিভি সেন্টারের সামনের ইউলুপের ওপরে এবং নিচে পরিবহনগুলো সন্ধ্যার পরই আটকে থাকে জ্যামে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা। অথচ এক মিনিটের রাস্তাও নয়। যাত্রীরা জানান, রাজউকের নির্মিত এ ইউলুপটি জনগণের কী কাজে আসছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।