গত ৩১ আগস্ট স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বর্তমানে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করছে। ৫০টিরও বেশি জাহাজ এবং অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিদল নিয়ে এটি সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক মানবিক মিশন। ফ্লোটিলার লক্ষ্য ইসরায়েলের আরোপিত নৌ-অবরোধ চ্যালেঞ্জ করা এবং গাজায় খাদ্য ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
তবে এই বিশাল নৌবহর বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অতীতে এমন মিশন হামলা ও আটকানোর শিকার হয়েছে। বুধবার ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, ফ্লোটিলার নিয়ন্ত্রণে নিতে ইসরায়েলি সেনারা নৌ কমান্ডো ও যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছু জাহাজ সরাসরি ডুবিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছে। ইসরায়েল শত শত অংশগ্রহণকারীকে আটক করে আশদোদ বন্দরের মাধ্যমে বহিষ্কার করার পরিকল্পনা করছে।
আন্তর্জাতিক জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ
উপকূলবর্তী দেশ তার তীর থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল (২২ কিমি) পর্যন্ত পানিসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ভোগ করে। এর বাইরে ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০ কিমি) পর্যন্ত অঞ্চলকে বলা হয় এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড), যেখানে মাছ ধরা, খনিজ আহরণ ও জ্বালানি অনুসন্ধান ইত্যাদি বিষয়ে রাষ্ট্রের অধিকার থাকে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌযান অবাধে চলাচল করতে পারে।
সমুদ্র আইন অনুযায়ী
১৯৮২ সালের জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (UNCLOS) আন্তর্জাতিক জলসীমায় সব রাষ্ট্রের নৌযানের চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র জলদস্যুতা বা অনুমোদনহীন কর্মকাণ্ড।
আগের ফ্লোটিলা হামলা
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাভি মারমারা জাহাজে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি কমান্ডোরা ১০ কর্মীকে হত্যা করেন এবং ১২–১৫ জন আহত হন। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা দিয়েছেন, ফ্রিডম ফ্লোটিলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবাধ চলাচলের অধিকার রয়েছে।
আইনি সুরক্ষা
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের মতে, সুমুদ ফ্লোটিলা নিম্নলিখিত আইনের অধীনে বৈধ:
-
UNCLOS (১৯৮২): আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে
-
সান রেমো ম্যানুয়াল: অনাহার বা অযথা ভোগান্তি সৃষ্টি করা অবরোধ নিষিদ্ধ
-
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ২৭২০ ও ২৭২৮: মানবিক সহায়তার প্রবেশ ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণের দাবি
-
জেনোসাইড কনভেনশন: বেসামরিক নাগরিকদের বিপন্ন করার কাজ প্রতিরোধ
-
চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন: মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশের অনুমতি
-
রোম স্ট্যাটিউট (আইসিসি): অনাহার সৃষ্টি ও মানবিক সহায়তা ব্যাহত করা আন্তর্জাতিক অপরাধ
আইটিএফ মহাসচিব স্টিফেন কটন বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় অহিংস ও মানবিক নৌযানকে হামলা বা দখল করা বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য। এটি জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এবং বৈশ্বিক সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নষ্ট করে।”
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আন্তর্জাতিক নাগরিক উদ্যোগ ও মানবিক সহায়তার প্রতীক হিসেবে আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত।
বিডি প্রতিদিন/আশিক