মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষ ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ফলে সংঘাতপূর্ণ ওই অঞ্চলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও ওষুধসংকট। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অভিমুখে ফের রোহিঙ্গা ঢলের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হওয়া ১৩ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়ের মাঝে আবার নতুন করে ঢল শুরু হলে আরও চাপে পড়বে বাংলাদেশ। অপরাধপ্রবণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়বে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। এ বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল আশ্রয় শিবিরগুলোতে জীবনযাত্রার মান ও মানবিক সেবার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ইতোমধ্যে সক্রিয় থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তার নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে আরও বাড়তে পারে। তাই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট নিরসন জরুরি। তা না হলে দেশের জন্য ভয়ংকর সংকট অপেক্ষা করছে।’ রোহিঙ্গা কমিনিউটি নেতা আনিস মোস্তাফা বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি দুই পক্ষই আগ্রাসন চালাচ্ছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাদ্য এবং ওষুধসংকট। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে।’ জানা যায়, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে সংঘাত। অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে ওই অঞ্চলের বেসামরিক মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে বিপন্ন। সংঘাত ও মানবিক পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ব্যাহত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে রোহিঙ্গারা, খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র অভাবে ভুগছে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর শিকারে পরিণত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ধ্বংস করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার পুনরায় বাংলাদেশ অভিমুখে ঢল নামার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশের ওপর মানবিক ও অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আরকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধের জেরে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে আরও ১ লাখ রোহিঙ্গা। এতে গত ৬ বছরে দেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখের বেশি।