আমেরিকার আলাস্কায় এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে দুই প্রভাবশালী বিশ্বনেতার এই বৈঠক। কিন্তু কোনো বিষয়েই তারা একমত হতে পারেননি। এমনকি ট্রাম্পের অ্যাজেন্ডার মূল বিষয় ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়েও কোনো সমাধান আসেনি।
শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্করেজের জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর অস্পষ্টভাবে ইতিবাচক মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, আমরা অনেক বিষয়েই ঐকমত্য হয়েছি, তবে সামান্য কিছু বাকি আছে। কিন্তু তিনি সেই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানাননি। এমনকি সেগুলো ইউক্রেন সম্পর্কিত কিনা তাও স্পষ্ট করেননি।
ট্রাম্প শুধু যোগ করেন, আমাদের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি।
এর কিছুক্ষণ আগেই নিজের বক্তব্যে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেন নিয়ে তার কঠোর অবস্থানে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেননি। তিনি বলেন, এটি আমাদের নিরাপত্তার মৌলিক হুমকির সঙ্গে জড়িত। আমরা নিশ্চিত যে, এই সমস্যার একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আমাদের সংঘাতের প্রাথমিক কারণগুলো দূর করতে হবে।
মস্কো দাবি করেছে যে, ইউক্রেনকে তাদের বিশাল একটি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। এছাড়া, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ভেঙে দিতে হবে। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের শপথ থেকে সরে আসতে হবে এবং ভলোদিমির জেলেনস্কি সরকার পরিবর্তন করতে হবে।
পুতিন অস্পষ্টভাবে তার এবং ট্রাম্পের মধ্যেকার চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি বলেন, আমরা আশা করি কিয়েভ এবং ইউরোপীয় রাজধানীগুলো এটি গঠনমূলকভাবে দেখবে।
এদিকে ট্রাম্প জানান, তিনি শিগগিরই ন্যাটো নেতাদের, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অন্যদেরকে বৈঠকে যা বলা হয়েছে, তা জানাতে ফোন করবেন।
শত শত সাংবাদিকের কোনো প্রশ্ন না নিয়েই চলে যাওয়ার আগে ট্রাম্প বলেন, সম্ভবত খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে। এর জবাবে পুতিন ইংরেজিতে বলেন, পরের বার মস্কোতে। ট্রাম্প এতে হেসে বলেন, ওহ, এটা একটি আকর্ষণীয় বিষয়। এ নিয়ে আমাকে কিছুটা চাপের মুখে পড়তে হতে পারে। তবে আমি দেখতে পাচ্ছি যে এটি সম্ভবত ঘটতে পারে।
এই সংবাদ সম্মেলন পুতিনের জন্য একটি অত্যন্ত উষ্ণ অভ্যর্থনার পর অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা নেতারা বছরের পর বছর ধরে তাকে এড়িয়ে চলেছেন। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়া, পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আমেরিকারও। এরপরও ট্রাম্প তাকে লাল গালিচায় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সাধারণত একজন সম্মানিত রাষ্ট্রপ্রধানকে লাল গালিচায় অভ্যর্থনা জানানো হয়।
তারা হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে হাত মেলান এবং একসঙ্গে লাল গালিচায় হেঁটে যান। আমেরিকার বি-২ বোমারু বিমান ছিল তাদের ওপর দিয়ে মহড়া দেয়। এরপর পুতিন ও ট্রাম্প একটি গাড়িতে ওঠেন। সেখানে তারা কোনো দোভাষী ছাড়াই পাশাপাশি বসেন। দুই চিরশত্রু দেশের নেতার একই গাড়িতে চড়ার মতো খুবই অস্বাভাবিক একটি দৃশ্য ছিল এটি।
সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস
বিডি প্রতিদিন/কেএ