শনিবার, ৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছয় খাতের শেয়ার ঘিরে চলছে যত লেনদেন

বিনিয়োগকারীরা ফের বাজারমুখী

আলী রিয়াজ

ছয় খাতের কোম্পানির শেয়ার ঘিরে চলছে লেনদেন। এগুলো হচ্ছে— ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, ওষুধ, টেক্সটাইল ও জ্বালানি খাত। দীর্ঘদিন মন্দা থাকায় শেয়ারবাজারে অনেক বিনিয়োগকারী লেনদেন করেনি। চলতি বছরের শুরুতে বাজারে চাঙ্গা ভাব ফিরে আসায় নতুন করে বিনিয়োগ ও লেনদেন করছেন তারা। নতুন বিনিয়োগ ও লেনদেনের শীর্ষ খাত হিসেবে এসব কোম্পানি বেছে নিচ্ছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব খাতে বেশি লেনদেন হচ্ছে কোম্পানি হিসেবে এগুলো বাজারে ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। ফলে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে এসব খাতে বিনিয়োগ করছে। এটা বাজারের জন্য ইতিবাচক। তবে এর মধ্যে কিছু বাজে শেয়ারও রয়েছে। এসব শেয়ার সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে বাড়ছে শেয়ারের সূচক। গত দুই মাসে শেয়ারের সূচক বেড়েছে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। এ সময় লেনদেনের খরা কাটিয়ে দুই হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা গত কয়েক বছরের মধ্যে বেশি। দুই মাসে গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার ওপরে ছিল। ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশির ভাগ শেয়ার দর ছিল অভিহিত (১০ টাকা) মূল্যের নিচে। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর ব্যাংক খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীরা। তখন কোনো কোনো শেয়ার দর ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ধসের পর এসব শেয়ারের দর নেমে আসে ১০ টাকার নিচে। সাম্প্রতিক সময়ে একমাত্র আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ছাড়া সব শেয়ারের দর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এরপরে ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতিও ছিল একই রকম। এসব শেয়ারের দরও দুই মাসে দ্বিগুণ হয়েছে। বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ওষুধ খাতের ২৮টি কোম্পানির মধ্যে ১০টির শেয়ার দর কয়েক বছর ধরে অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি লেনদেন হয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর ছিল ১০ টাকার নিচে। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহের শেয়ারে পরিণত হয়েছে এই খাত। ডিএসইর লেনদেনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এই খাতের শেয়ারে। কোনো কোনো দিন এই খাতের দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। প্রকৌশল খাতের ৩৩টি কোম্পানির শেয়ারের দর ওঠানামা করেছে সবচেয়ে বেশি। কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিএসইসির পক্ষ থেকে অনিয়ম, জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। দীর্ঘদিন এই খাতের শেয়ারে লেনদেন ছিল কয়েক কোটি টাকায়। সাম্প্রতিক সময় দেখা গেছে মোট লেনদেনের প্রায় ১৫ শতাংশই হচ্ছে প্রকৌশল খাতের। শেয়ার হাতবদলের সংখ্যা হিসেবেও প্রকৌশল খাতের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে। হাতবদলে শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় থাকছে এসব প্রতিষ্ঠান। এরপরেই টেক্সটাইল খাতের কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে। এ খাতের কিছু বাজে শেয়ার নিয়ে ২০১০ সালে বড় ধরনের কারসাজি হয়। এ খাতের তালিকাভুক্ত ৪৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩০টি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণও পাওয়া যায়।

 ২০১৬ সালেও এই খাতের ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর ছিল অভিহিত মূল্যের নিচে। চাঙ্গা বাজারে এখনো ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দর অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে শীর্ষে চলে এসেছে। প্রতিদিনের লেনদেনের প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হয় এই খাতের শেয়ারে। ২০১০ সালের পর থেকে জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ায় এই খাতের শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। প্রতিদিনের লেনদেন প্রায় ১০ শতাংশই হচ্ছে জ্বালানি খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে।

জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যেসব খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে সেগুলো ভালো কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দীর্ঘদিন ধরে অভিহিত মূল্যের নিচে ছিল। সম্প্রতি ব্যাংকের বিশেষ কিছু সুবিধার কারণে তারা বিনিয়োগ করতে পেরেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়া স্বাভাবিক। এ ছাড়া অন্য যেসব খাতে বেশি শেয়ার লেনদেন বা বিনিয়োগ হচ্ছে সেগুলোও ভালো শেয়ার। ফলে এটা কোনো নেতিবাচক কিছু নয়। তবে এসব শেয়ারের মধ্যে কিছু বাজে শেয়ারও রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর