শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নেই আর নেই বেসরকারি হাসপাতালে

চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বেহাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

নেই আর নেই বেসরকারি হাসপাতালে

লাইসেন্স নবায়ন নেই, নিবন্ধন নেই, অনলাইন নিবন্ধনের কাগজপত্র নেই, ইমারজেন্সি নেই, মানসম্মত অপারেশন থিয়েটার নেই, ডিপ্লোমাধারী নার্স নেই, সেবার মূল্য তালিকা নেই, অপারেশন থিয়েটারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেও প্রশিক্ষিত নার্স নেই, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই, হাসপাতাল পরিচালনার নথি নেই, নেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো নথি। এতসব ‘নেই’ নিয়েই চলছে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সঙ্গে আছে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও নোংরা পরিবেশ। গত চার দিনে পরিচালিত অভিযানে এসব নেই এর দৃশ্য প্রকাশ পায়। এর আগে গত জুন মাসে চার দিনের অভিযানে ১১টি হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং চারটিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নের পর খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, বেসরকারি অনেক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বাণিজ্য করে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত সেবা না থাকলেও রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় গলাকাটা মূল্য। এর কোনো প্রতিকার নেই। ফলে ভোগান্তি ও উচ্চমূল্য দিয়ে নিতে হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, গত চার দিন ধরে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টানা অভিযান পরিচালিত হয়। চার দিনে নগর ও জেলায় মোট ১৮৪টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ৪১টি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সংশোধনী দেওয়া হয়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মানুষের জীবনের সম্পর্ক। তাই এখানে কেবল ব্যবসার মনোভাব থাকা উচিত নয়। প্রকৃত নিয়ম মেনেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত লিখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) বরাবরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।

জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক। অভিযানে যেসব অভিযোগ বের হচ্ছে তা রীতিমতো বিস্ময় জাগানো। তাই আমরা মনে করি, জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত রাখা উচিত। একই সঙ্গে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে- অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, আইনগত বিষয়টির শেষ পর্যন্ত একটি ফলাফল আনা, বিষয়গুলো জনসম্মুখে অবহিত করা এবং কোন অভিযোগের কী শাস্তি তা জনগণকে জানানো। অভিযান যাতে কোনোভাবেই লোক দেখানো না হয়। স্বাস্থ্য বিভাগকে সেটিই গুরুত্ব দিতে হবে।

জানা যায়, ২৯ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। অভিযানে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ব্যাপক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা উঠে আসে। গত ২৯ আগস্ট নগর ও ১৫ উপজেলায় মোট ৪৯টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক ১৬টি ও প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩৩টি। অভিযানে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে ১৭টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট ৫৩টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে নগরের একটি হাসপাতাল এবং ১৪ উপজেলার ১১টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ৩১ আগস্ট ৩৯টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ছয়টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মহানগরে পাঁচটি এবং উপজেলায় একটি। গতকাল ৪৩টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর