বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
নিজের বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে রাষ্ট্রপতি

আমি হাওরের কাদাজলে বড় হওয়া একজন মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আমি হাওর অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় জন্ম নেওয়া ও হাওরের কাদাজলে বেড়ে ওঠা একজন সাধারণ মানুষ। কোনো কিছু পাওয়া বা হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কখনো রাজনীতি করিনি। জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই, উত্থান পতন এসেছে। সবকিছু মোকাবিলা করতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অনুপ্রেরণাই শক্তি জুগিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নিজের আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ ও দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ের ভাষণ নিয়ে লেখা ‘স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা’ বই দুটির প্রকাশনা উৎসবে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সহধর্মিণী ফার্স্টলেডি বেগম রাশিদা খানম। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু প্রমুখ।

মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। এর আগে সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজের সম্পর্কে বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকে আমার রাজনীতি শুরু। তখনো বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি। কিন্তু সেই মহামানবের ভরাট কণ্ঠের উদাত্ত আহ্বান সবসময়ই আমাকে স্বাধিকার আন্দোলনের চেতনায় উদ্ভাসিত করত। ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। আর সেই থেকেই শুরু হয় সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে পথচলা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শই হয়ে ওঠে আমার পাথেয়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৮-এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ছাত্রলীগের ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধসহ সবকিছুতেই আদর্শ ও অনুপ্রেরণার উৎস একজনই। আর তিনি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী দিনে মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বাধীনতা বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন এবং মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হলে তাদেরকে এসবের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। আর এ দায়িত্বটা আমাদের সবার। তাই আমি প্রবীণ রাজনীতিবিদদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’

সব রাজনীতিবিদকে আত্মজীবনী লেখার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি বইয়ে অনেক রসবোধ আছে, আছে তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। এ সময় তিনি, মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ের ঘটনাও আত্মজীবনীর পরবর্তী খণ্ডে লিপিবদ্ধ করার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় একাধিক নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহ ও অভিজ্ঞতা এবং আপনার অবসরকালীন জীবনের অভিজ্ঞতা আত্মজীবনীর অন্যখণ্ডে যোগ হতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী বলেন, শৈশব থেকেই দেশমাতৃকার সেবায় তিনি আত্মনিয়োগ করেন। এই বইতে তিনি ২৫ বছরের এক অন্যন্য আলেখ্য উপস্থাপন করেছেন নির্মহভাবে। এই বই পড়ে মানুষ তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারবেন। একই সঙ্গে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

প্রকাশনা উৎসবে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে তাঁর সহধর্মিণী ফার্স্ট লেডি রাশিদা খানম বলেন, ‘ছোট গল্পের চরিত্রের মতোই শেষ হইয়া হইল না শেষ। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আজকের প্রকাশনা উৎসবের বই দুটির গ্রন্থকার ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে। এতদিন তাঁর পরিচয় ছিল রাজনীতিবিদ হিসেবে; আইনবিদ, সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে।

তিনি বলেন, ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ বইয়ের অনেক ঘটনারই প্রত্যক্ষদর্শী আমি। বিশেষ করে কলেজ জীবন থেকে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর স্মৃতি আজও আমাকে নাড়া দেয়।’ তবে রাষ্ট্রপতির এই আত্মজীবনী গ্রন্থের কিছু বর্ণনা নিয়ে হাস্যরস করে রাশিদা খানম বলেন, সব ঘটনা ও কাহিনী ঠিকঠাক থাকলেও প্রেম-বিয়ের ঘটনার বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছু গণ্ডগোল আছে। অর্থাৎ সুবিধামতো কিছু বাড়িয়ে বলা আবার কিছু ক্ষেত্রে চেপে যাওয়া। এটা মনে হয় সব পুরুষ মানুষই করে থাকে। এ বিষয়ে আপনারা সবটুকু বিশ্বাস করবেন না।’

তবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে ৬০ বছরের সহযাত্রী অনেক ঘটনা, অনেক স্মৃতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ‘ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের অনেক বিষয় এ বইয়ে উঠে এসেছে। তবে সুদীর্ঘ ৬০ বছর ধরে তাঁর সঙ্গে সংসার করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে তিনি এ পর্যন্ত যতোগুলো সিগারেট পুড়িয়েছেন প্রতিটির বিনিময়ে একটি লাইন লিখতে পারলে একটা মহাকাব্য হয়ে যেত। দীর্ঘ ৬০ বছরে তাঁর সঙ্গে আমার অনেক অম্লমধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর