শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতা কমবে এই বর্ষায়?

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৭৬.২৫ শতাংশ কাজ শেষ

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতা কমবে এই বর্ষায়?

চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পের কাজ ৭৬.২৫ শতাংশ শেষ। আসন্ন বর্ষায় প্রকল্পের পুরো সুফল না মিললেও জলাবদ্ধতা কমবে, আশা করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। তবে তারা বলছে, জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে নগরবাসীর সচেতনতার বিকল্প নেই। নাগরিকরা যদি ড্রেন ও খালে ময়লা ফেলতে থাকে তাহলে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি কখনোই মিলবে না। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্প ২০১৭ সালে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রকল্প সম্পাদনের জন্য সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চুক্তি হয়। এর পর থেকে ড্রেনেজ অবকাঠামো সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। ২০২০ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে পরে এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। গত বছরের মার্চে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা করা হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ মো. আলী জানান, প্রকল্পের ভৌত কাজের অগ্রগতি ৭৬.২৫ শতাংশ। প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালের মধ্যে ১৫টির আবর্জনা অপসারণ, প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ শেষ। চলতি মাসে আরও ৭টি খালের কাজ শেষ হবে। বাকিগুলো পরবর্তী অর্থবছরে শেষ হবে। ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ। ৪৫টি ব্রিজ ও ৬টি কালভার্ট নির্মাণ শেষ। ১৫.৫০ কিমি ড্রেন সংস্কারের পাশাপাশি ১০.৭৭ কিমি নতুন ড্রেন নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পে নিয়োজিত সূত্রগুলো জানিয়েছেন, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপের মধ্যে ১৩টির নির্মাণ শেষ হয়েছে। খালপাড়ের ৮৫.৬৮ কিমি রাস্তার মধ্যে ১৫.৫০ কিমি ও ৫০ কিমি ফুটপাতের মধ্যে ৫.৫০ কিমির কাজ শেষ। মহেশখাল, ফিরিঙ্গিবাজার, টেকপাড়া, মরিয়ম বিবি ও কলাবাগিচা খালে রেগুলেটর স্থাপন প্রায় শেষ। তবে কিছু জায়গায় এখনো ভূমি অধিগ্রহণ বাকি আছে।

প্রকল্পে অগ্রগতি সম্পর্কে ২ মে সংবাদ সম্মেলনে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি মেগা, একই সঙ্গে জটিল। বছরের অর্ধেক সময় এখানে কাজ করা যায় না। তবে যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতে নগরীতে পানি কম হবে বলে আশা করা যায়। পুরোপুরি সুফল হয়তো মিলবে না; তবে ভোগান্তি কমবে। প্রকল্পের কাজ শেষে রক্ষণাবেক্ষণকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এদিকে প্রকল্পের চার ভাগের তিন ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করা হলেও নগরীর জলাবদ্ধতা থেকে শতভাগ মুক্তির আশ্বাস দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। প্রকল্পের কাজ শেষ দিকে হলেও প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের ওপর সুফল নির্ভর করবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীর ড্রেন পরিষ্কার ও খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক), সেহেতু তাদের ওপরই সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ আসছে। প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, চসিক যদি নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করে তাহলে পানি খালে যাবে না। আর পানি খালে না গেলে নগর প্লাবিত হবে।

সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘৫টি খালের মুখে রেগুলেটর চালু করা হয়েছে। মহেশখালের রেগুলেটর চালুর পর আগ্রাবাদ-হালিশহরে জোয়ারের পানি আর উঠবে না। এবার বর্ষায় আগের মতো পানি উঠবে না। কিন্তু এখন চসিকের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে।’ প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের এপ্রিলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘবে সমন্বয় সভা করে চসিক ও সিডিএ। এতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সংস্কার হওয়া খাল-নালা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চসিককে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব আসে। কিন্তু চসিক মেয়র সে সময় খাল রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন।

না হলে খাল রক্ষণাবেক্ষণ চসিকের জন্য বোঝা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর