দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে দিনভর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বরিশাল সিটির প্রধান তিন মেয়র প্রার্থী। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। নতুন বরিশাল গড়তে ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। নৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের উৎসাহিত করছেন জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস। নির্বাচনের সার্বিক চিত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সন্তোষ প্রকাশ করলেও কারচুপির আশঙ্কা করছেন অপর দুই প্রার্থী। প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বিধিনিষেধ থাকলেও বরিশালের প্রধান তিন মেয়র প্রার্থী সেই নিয়ম মানছেন না। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কৌশলে মাঠে নেমেছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়ও ঘরে বসে থাকেননি কেউ।
দিনের প্রথম ভাগে কালুশাহ সড়কের ভাড়া বাসায় বিভিন্ন ওয়ার্ড নেতার সঙ্গে আলাদা সভা করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। সভায় তিনি ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন। বিকালে নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন তিনি। সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অটোরিকশা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত নতুন বরিশাল গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জনসাধারণকে। মানুষ আশ্বস্ত হতে পেরেছে খোকন সেরনিয়াবাতের হাতে তারা নিরাপদ। তার মাধ্যমেই বরিশালের অবকাঠামোগত আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব। এই স্লোগানে বরিশালের আপামর জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নৌকার প্রার্থী সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম দিনের প্রথম ভাগে ব্যস্ত ছিলেন সাংগঠনিক বিভিন্ন তৎপরতায়। তার প্রচারণায় রয়েছে ভিন্নতা। মসজিদভিত্তিক গণসংযোগ করছেন তিনি। গতকাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দরগাহবাড়ি জামে মসজিদে আসর, মুন্সিগ্রেজ আল-আমিন জামে মসজিদে মাগরিব এবং কাউনিয়া আকন ভিলা জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায় করেন তিনি। নামাজের আগে ও পরে মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে মুফতি ফয়জুল বলেন, বরিশাল নগরী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। হাতপাখা বিজয়ী হলে বরিশালের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি নৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে কাজ করবেন তিনি।
নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশের বিষয়ে ফয়জুল করীম বলেন, সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। তাদের প্রশ্ন, ভোট দিতে পারব কি না। ভোট দিলে আপনি ভোট রাখতে পারবেন কি না। তারা কেন্দ্রে যেতে চান। জনগণ ভোট দিতে পারলে হাতপাখা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গতকাল দিনের প্রথম ভাগে নগরীর সাগরদী বাজার থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। দুপুরে নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের শের-ই বাংলা সড়কে একটি জানাজায় অংশ নেন তিনি। বিকালে নগরীর মতাসার এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় সদর রোডের কীর্তনখোলা হলে পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জাপা প্রার্থী তাপস। গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে মানুষের মনের শঙ্কা কাটাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তা একচোখা আচরণ করছে। এই রিটার্নিং কর্মকর্তা একজন বিশেষ প্রার্থীর আত্মীয়। তিনি থাকলে বরিশাল সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। স্বচ্ছ সুন্দর নির্বাচন করতে রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করেন তিনি।
অন্য তিন মেয়র প্রার্থী জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু এবং স্বতন্ত্র কামরুল আহসান রূপণ ও আলী হোসেন হাওলাদারের দৃশ্যমান নির্বাচনী তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।