পেশাদার ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের। ২৩ বছর পর শিরোপা জেতায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ একাধিক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করেছে। সংবর্ধনা জানানো হয়েছে খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের। এমন উৎসবের মাঝেও ক্লাবে স্বস্তি নেই। বলা যায় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে অনুষ্ঠান করলেও চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক শোধ করতে পারেনি। অবশ্য ক্লাবের বর্ষীয়ান সংগঠক ফজলুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদেশি ও লোকাল সবারই পেমেন্ট ক্লিয়ার। অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বলেন এতদিন পর চ্যাম্পিয়ন, আনন্দ উল্লাস তো হবেই।’
প্রথমবার পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে সমর্থকদের প্রত্যাশা সাফল্য ধরে রাখতে নতুন মৌসুমে দলের শক্তি বাড়বে। কিন্তু তা কি সম্ভব? কেননা ক্লাবের অনেকেই বলছেন, মানসম্পন্ন খেলোয়াড় আনতে অর্থ তো দরকার। এত বড় ক্লাবে ২/৩ জন টাকা দিলে ভালো করা কীভাবে সম্ভব। ফুটবলে মূলত মোহামেডানকে দুজন অর্থ দিয়েছেন। একজন ক্লাব সভাপতি জেনারেল মুবীন ও আরেকজন ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। এ ক্ষেত্রে আবার অনেকে আলমগীরের প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি প্রতিকূল অবস্থায় থেকে যেভাবে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন তাতেই শিরোপা জেতা সম্ভব হয়েছে। কেউ কেউ আবার তাকে আগের নিবেদিত সংগঠক মুনিরুল হক চৌধুরী, শেখ আকমল ও তানভীর হায়দারদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে মোহামেডানকে ভালোবেসে যে লোক এত সহযোগিতা করলেন, সেই আলমগীর হঠাৎ করে কোরবানির আগে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন কেন? তিনি তার পদত্যাগপত্র ক্লাব সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন। তবে তা এখন পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন শিরোপা ধরে রাখতে নতুন মৌসুমে আরও শক্তিশালী দল গড়া হবে। এখন তিনি যদি ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে না থাকেন তাহলে ফান্ড পাবে কোথায়?
মোহামেডানের সাবেক এক ফুটবলার বলেন, ‘আলমগীর ভাই বিরক্ত হয়েই পদত্যাগ করেছেন। কেননা এত বড় ক্লাবে কেউ অর্থ দিতে চান না। ১৬ পরিচালক আছেন যাদের মধ্যে ২/৩ জন ছাড়া কেউ দলকে এক পয়সা দিয়েও সহযোগিতা করেন না। অর্থ যদি না দিতে পারে তাহলে পরিচালক হন কেন? আবাহনীর সংকটময় অবস্থাতেও পরিচালকরা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এক আলমগীর ভাই ও মুবীন স্যার এত টাকা কোথায় পাবেন। জানা গেছে, স্থায়ী ফান্ডের জন্য সামনের বার্ষিক সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত আসতে পারে যারা পরিচালক নির্বাচিত হবেন সবাইকে ২৫ লাখ টাকা করে অনুদান দিতে হবে। যেখানে আবাহনীর পরিচালকরা দেন ১ কোটি করে। এ ব্যাপারে একজন সাবেক খেলোয়াড় বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত হলো তো ভুলেও কেউ ক্লাবে পা রাখবেন না।’
কারও কারও ধারণা ক্লাবে এমন এলোমেলো অবস্থা কেটে যাবে নির্বাচন হলে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ দুই বছরেরও বেশি অতিক্রম করেছে। এজিএম ও নির্বাচনের কাজের তদারকি করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্লাবের সাবেক সদস্য সচিব অভিজ্ঞ সংগঠক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও মাহবুব আনামকে। গতকাল এ নিয়ে আলাপ হয় লোকমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা অনেক কাজ গুছিয়ে এনেছি। ভোটার সংখ্যা ৩৮০ ঠিক হয়ে গেছে। এ বছরের জুলাই শেষ বা আগস্টের প্রথম দিকে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের ওপর যদি নির্ভর করে শক্তিশালী দল গড়া। তাহলে তো কোনো লাভ নেই। জুলাই ও আগস্টের মধ্যে তো দল বদলই শেষ। তখন খেলোয়াড় সংগ্রহ করবে কীভাবে? আসলে চ্যাম্পিয়নের পরও সত্যিই মোহামেডানের হযবরল অবস্থা। তা কীভাবে কাটবে সেটাই প্রশ্ন।