অন্তর্বর্তী সরকার এবার রেলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পূর্বাঞ্চল রেল থেকে এ সংস্কারমূলক উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রেল নিরাপদ বাহন হলেও অধিকাংশ সময়ই শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। ট্রেন সময়মতো না ছাড়ার ঘটনা প্রায় ঘটে। টিকিট কালোবাজারি রোধে এনালগ থেকে অনলাইন পদ্ধতি গ্রহণ করা হলেও তা রোধ করা যায়নি। অন্যদিকে, রেলের ভূমি যার যেদিকে ইচ্ছা দখল করে ভোগ করার প্রতিযোগিতা চলছে। এ অবস্থায় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই তিন ক্ষেত্রে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে সংস্কার শুরুর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এরই মধ্যে এই তিন খাতে সংস্কারের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তাছাড়া একই পদে দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তাদেরও একটি তালিকা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা অনেকটা নিয়মিতই ঘটে। এবার শিডিউল বিপর্যয় রোধে সময়ানুবর্তিতা ঠিক রাখতে গঠন করা হয়েছে একটি টাস্কফোর্স। এই টাস্কফোর্স সময়ানুবর্তিতা ঠিক রেখে রেল চলাচলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তাছাড়া টিকিট কালোবাজারি রোধে রেল কর্তৃপক্ষ গত বছরের ১ মার্চ থেকে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ শীর্ষক জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন দিয়ে টিকিট কাটার নিয়ম চালু করে। কিন্তু এরপরও টিকিট কালোবাজারি থামেনি। তাই কালোবাজারি থামাতে গঠন করা হবে টাস্কফোর্স। অন্যদিকে, প্রতিনিয়তই বেহাত হচ্ছে রেলের জায়গা। তাই রেলের ভূমি নিয়ে নয়ছয় বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে রেলের জায়গা কোথায় কীভাবে কী পরিমাণ বেদখল হয়ে আছে- জরুরিভাবে এ তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, রেল যথাসময়ে চলে কি না তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি রেলের সময়ানুবর্তিতার বিষয়টি তদারক করবে। তাছাড়া টিকিট কালোবাজারি রোধেও কাজ চলছে। তবে টিকিট এখন অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় কালোবাজারি হওয়ার সুযোগ নেই। অনলাইনে থাকলেই যে কোনো যাত্রী এনআইডি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে টিকিট কাটতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ অনলাইনের মাধ্যমে কাটার নিয়ম চালু করে। তারপরও থেমে নেই কালোবাজারি। অনলাইনে টিকিট বিক্রির পরও কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমেনি। সর্বশেষ গত ১৫ জুন টিকিটসহ তিনজন কালোবাজারিকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে সঠিক সময়ে রেল চলাচলে প্রায় সময় বিঘ্ন ঘটে। তাই সময়ানুবর্তিতা ঠিক রাখতেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কারিগরি ত্রুটি নিরসনের।
রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলের অধীন মোট জমি আছে ২৪ হাজার ৪০০ একর। এর মধ্যে নানাভাবে বিভিন্ন প্রভাবশালীদের দখলে আছে প্রায় ৪৮২ দশমিক ৫ একর জমি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও প্রভাবশালীরা দখল করে বস্তি ও মার্কেট নির্মাণ করেছে।