বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের জন্য স্থায়ী সম্মানি ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের জন্য সার্ভিস রুল করা হবে। ক্ষমতায় গেলে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গড়া হবে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে (২০২৫) প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তৃতায় এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারেক রহমান। এ সময় তিনি স্বাধীনতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, আলেমরা সমাজ সংস্কারক। আগামী নির্বাচনে ইমাম-খতিবসহ সব আলেমদের সমর্থন চাই। আলেম-ওলামাদের বাদ রেখে কখনো স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিএনপি সবসময় ইসলামবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার আছে। ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে বিএনপি কখনো আপস করেনি।
এ সময় সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব মুফতি আজহারুল ইসলাম ইমাম-খতিবদের সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন। মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাকীর সভাপতিত্বে মুফতি আজহারুল ইসলাম ও মুফতি শরিফুল্লাহর পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা সারোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা আবদুর রহিম ইসলামাবাদী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা আবদুল আওয়াল, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবাহানী, মুফতি আবদুল কাইয়ুম কাসেমী ও মুফতি রেজাউল করীম আবরারসহ অন্য শীর্ষ আলেম-ওলামারা। শীর্ষ আলেমদের মধ্যে ছিলেন হাফেজ মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, শাহ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন ও মাওলানা আবদুল হাই নদভীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বহু আলেম-ওলামা।
ইমাম-খতিবদের মধ্যে আরও ছিলেন ড. খলিলুর রহমান মাদানী, মুফতি আবু সাঈদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান মমতাজি, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আবদুল হাই মিশকাত ও মুফতি বশিরউল্লাহ।
তারেক রহমান বলেন, আমরা সবাই জানি, আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়ে আমাদের মহানবী (সা.)-কে যারা অপছন্দ করতেন তারাও মহানবীকে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে মানতেন এবং বিশ্বাস করতেন। মহানবীর ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে মুসলমান-অমুসলমান, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কারও মধ্যেই কোনো সংশয় ছিল না। মহানবীর সেই ন্যায়পরায়ণতার আদর্শ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনায় বিএনপির মূল মন্ত্র হবে ন্যায়পরায়ণতা, ইনশাআল্লাহ। দেশ এবং জনগণের কল্যাণে আল্লাহ যেন আমাকে এবং আমাদের দলকে প্রতিটি সৎকর্ম বাস্তবায়নের সুযোগ দেন। এজন্য আপনাদের দোয়া, সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের উপস্থাপিত দাবির বেশ কয়েকটি অগ্রধিকার ভিত্তিতে পূরণ করার সব রকমের সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। আপনারা ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। আপনাদের এ দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক। অনেক মসজিদে মসজিদ কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরে ইমাম-মুয়াজ্জিনের চাকরি নির্ভর করে। আমি মনে করি এটি হওয়া উচিত নয়, এটি হতে পারে না। এটিকে আমি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বিরুদ্ধে অন্যায্য আচরণ বলে মনে করি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে আপনাদের সার্ভিস রুল প্রণয়নের ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। উপস্থাপিত অন্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগও বিএনপি সরকার ইনশাল্লাহ গ্রহণ করবে। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ‘সার্ভিস রুল প্রণয়নের’ ব্যাপারে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। উত্থাপিত অন্য দাবি-দাওয়াগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ইমাম-খতিবদের একাধিক কমিটি করে প্রতিটি দাবির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ বিএনপিকে প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
একইভাবে অন্য ধর্মের মানুষও নিরাপদে-নিশ্চিন্তে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করতে সক্ষম হবে। বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতি কিংবা মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপস করেনি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও করবে না।
তারেক রহমান বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি মনে করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস এবং মহানবীর ‘শান এবং মান’ সমুন্নত রেখে ইসলাম নিয়ে গবেষণায় নিঃসন্দেহে কোনো বাধা নেই। তবে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে বিরোধ কিংবা ভিন্নমত অথবা হীন দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় বিধানের উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা কখনো কখনো সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টিরও কারণ হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস’ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বর্তমানে সংবিধানে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস’ ‘কথাটি এভাবে রাখা হয়নি। কেন এভাবে রাখা হয়নি এ প্রশ্নটি আপনাদের সামনে রেখে গেলাম।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৪ সালে যখন পবিত্র রামাদান মাসে হঠাৎ করেই মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ‘ইফতার মাহফিল’ আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটি ছিল বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকের ওপর হানাদার বাহিনীর মতো ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছিল। গণহত্যার প্রতিবাদে এবং হেফাজতে ইসলামের সমর্থনে বিএনপি সারা দেশে দুই দিন হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল।
তিনি আরও বলেন, যে কোনো পেশা কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের গুরুত্ব বিবেচনা করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি ‘দাওরায়ে হাদিস’ অর্থাৎ ‘তাকমিল’ সনদকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ ২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলেই নেওয়া হয়েছিল।