দীর্ঘমেয়াদি ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে সামরিক কৌশলবিদদের সামনে নতুন বাস্তবতা হাজির করেছে। বর্তমান প্রজন্মের প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে টেকসই নয়। পারমাণবিক ওয়ারহেড ছাড়া এসব ক্ষেপণাস্ত্রের খরচ এতটাই বেশি যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এগুলো ব্যবহার করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বরং রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই এখন মূলত ড্রোননির্ভর লড়াই করছে। দামি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সস্তা ড্রোন ভূপাতিত করার চিত্রও মোটেই বিরল নয়।
এই প্রেক্ষাপটে তিনটি নতুন প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রের খরচ ও চরিত্র পাল্টে দিতে শুরু করেছে; রেলগান, নিউক্লিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, এবং হাই-এনার্জি লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
সাম্প্রতিক পরীক্ষায় জাপান তাদের নৌবাহিনীর জাহাজে বসানো রেলগান সফলভাবে প্রদর্শন করেছে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তিতে নিক্ষিপ্ত ফিন স্ট্যাবিলাইজড প্রজেক্টাইল লক্ষ্যবস্তুর ধাতব গায়ে ক্রস আকৃতির ছিদ্র তৈরি করে; যা বিস্ফোরক ছাড়াই প্রচণ্ড ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়।
রেলগানের শট প্রতি খরচ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় বহু গুণ কম, এবং ব্যারেল প্রায় ২০০ বার ফায়ারের সক্ষমতা রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার এখন সম্ভাবনার চেয়ে বাস্তবের কাছাকাছি।
জাপানের ঘোষণার কিছুদিন আগে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা সফলভাবে পরীক্ষা করেছে তাদের বহুল আলোচিত বুরেভেস্তনিক নিউক্লিয়ার চালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।
পুতিন দাবি করেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৫ ঘণ্টায় ১৪,০০০ কিলোমিটার উড়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, বর্তমান রূপে এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ আঘাতের সময় নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর ভেঙে পড়লে রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী উড্ডয়ন সক্ষমতার কারণে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি রিটার্ন-টু-বেস” ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মে রূপ নিতে পারে—যেখানে এটি বিভিন্ন ওয়ারহেড বহন করে মিশন শেষে ঘাঁটিতে ফিরে আসবে।
ড্রোন ও ক্ষুদ্র আকাশীয় হুমকি প্রতিরোধে লেজার সিস্টেম এখন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে লেজার দিয়ে ড্রোন নামানোর সাফল্য পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া ও ভারতও সমজাতীয় প্রযুক্তি তৈরি করছে।
কম খরচে প্রতি শটে একাধিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের ক্ষমতা থাকার কারণে লেজার ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
সস্তা আক্রমণাত্মক অস্ত্র যুদ্ধ শুরু করার প্রণোদনা বাড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তবে একই সঙ্গে যদি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও হয় সস্তা ও সহজলভ্য, তাহলে এটি আগ্রাসন ঠেকানোর কার্যকর প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
যুদ্ধের প্রকৃতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে; প্রযুক্তি প্রতিদিন সস্তা হচ্ছে, আর সংঘাতের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল