করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে সতর্ককতা জারির মধ্যে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চলছে আতঙ্ক। সেই আতঙ্কের মূল কারণ হচ্ছে দেশটিতে অনেক চীনা নাগরিক ভ্রমণ করেন প্রতিনিয়ত। এ কারণে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
এছাড়াও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং ঝুঁকি এড়াতে ভ্রমণকারী পর্যকটদের স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটিতে।
এখানে স্থানীয় এবং বিভিন্ন পর্যটকদের মুখে দেখা গেছে ‘মাস্ক’। শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষের মধ্যেই মুখে রয়েছে ‘মাস্ক’, হাতে রয়েছে হ্যান্ডওয়াশও। তবে মরণঘাতী এই করোনাভাইরাস নিয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংককসহ বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা সতর্ক এবং নিরাপদেই রয়েছেন বলে জানান বাংলাদেশিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককসহ বিভিন্ন এলাকার বিনোদন স্পটে পর্যটকদের ভীড় লক্ষ্যণীয়। বিনোদন স্পটগুলো ছাড়াও প্রতিটি মার্কেটগুলোতে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের ঝুঁকি এড়াতে পরা হয়েছে সতর্কতামূলক মাস্ক। এসব মাস্ক স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রীরা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝেও রয়েছে। বিমানবন্দর, মার্কেট, বিনোদন স্পটগুলোতেই রয়েছে তরল সাবানের ফেনায়িত হাত ধোঁয়ার পাত্র (হ্যান্ডওয়াশ)। প্রতিটি গেইটে সংরক্ষিত রয়েছে এটি। স্থানীয় থাকার হোটেলগুলোর প্রতিটি অভ্যর্থনা কক্ষগুলোর দায়িত্বশীলদের মাঝেও দেখা গেছে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় কাজ করতে। তাছাড়া বিভিন্ন পর্যকটদেরকেও ঝুঁকি এড়াতে সর্তকতামূলক মাস্ক পড়তে বলা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডে বসবাসরত আজিজ নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাসটি চীনসহ বিভিন্ন দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে চীনে কয়েক’শ লোকও মারা গেছেন। এসব সমস্যার কারণে থাইল্যান্ডের ব্যাংককসহ বিভিন্নস্থানে সতর্ক করেছে এ দেশের সরকার। এই ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশি পর্যটকরা সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন। তাছাড়া কোনো মার্কেট বা ভ্রমণে গেলেই হ্যান্ডওয়াশ দিয়েই পরিষ্কার করে নেন নিজেকে। একইভাবে খাবার খাওয়ার আগেই ভাল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতেও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশিদের। তবে এখনও পর্যন্ত এখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি ও বিভিন্ন পর্যকটরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
ব্যাংককে চিকিৎসা করতে আসা কাতারে অবস্থানরত ব্যবসায়ী বাংলাদেশি চট্টগ্রামের মোহাম্মদ এনাম বলেন, বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা করতে এসেছি। এখানে সেবাদানকারীরাসহ প্রত্যেকেই মাস্ক পড়ে কাজ করছেন। এই রোগের ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালের চারদিকে রয়েছে সতর্কাবস্থা। বিশেষ করে নজরদারিতে রেখেছেন চীনা নাগরিকদের। যেখানেই যাচ্ছি মুখে মাস্ক পড়েই যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এই হাসপাতালে বা বাইরে বাংলাদেশি পর্যটক এবং অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক আক্রান্তের খবর পাইনি। তবে থাইল্যান্ডের সব বিমানবন্দনগুলোও ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক রয়েছে বলে জানান আল মোহানাদী গ্রুপের মালিক এনাম নামে এই বাংলাদেশি।
থাইল্যন্ডের পাতায়ায় দেখা হওয়া বাংলাদেশি ঢাকার মেহেদী হাসান জ্যাকি নামের একজন পর্যটক বলেন, আমরা ৫ জন দেশ থেকে এসেছি বেড়াতে। বিমানবন্দর, সাফারি পার্ক, কোরাল আইল্যান্ডসহ যেখানেই গেলাম, সেখানেই মুখের মাস্কবিহীন কোনো পর্যটক দেখিনি। রয়েছে প্রতিটি গেইটেই হ্যান্ডওয়াশ। আমরা যথেষ্ট নিরাপদে এবং সতর্কভাবেই চলাফেরা করছি। তাছাড়া এখানকার স্কুল পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই সতর্কভাবটা দেখা গেছে।
কিছুদিন আগেই ব্যাংকক পোস্টের খবরে বলা হয়, দেশটিতে আগত পর্যটকদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে কঠোরভাবে। বিশেষ করে চীনা পর্যটকদের। থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুলও বলেছেন, বর্তমানে দেশটিতে ৮৪ জন চীনা পর্যটককে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ জনের জ্বর শনাক্ত করা হয় বিমানবন্দরেই। আর বাকি ৬০ জন বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে নিজে থেকেই হাসপাতালে গিয়েছেন চিকিৎসা নিতে। এদের মধ্যে মোট ৪৪ জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, যাদের সবাইকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের একদল চিকিৎসক দাবি করেছেন, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তারা পেয়েছেন। একজন চীনা নারী সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তার চিকিৎসায় ব্যাংককের ওই চিকিৎসকের দল ফ্লু এবং এইচআইভি'র অ্যান্টি ভাইরালসের ‘ককটেল’ তৈরি করে চিকিৎসা করেছিলেন। তাতে ৭১ বছরের ওই রোগী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নাকি দ্রুত সেরে উঠেছেন। একটি সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান থাইল্যান্ডের চিকিৎসক ক্রিংস্যাক আট্টিপর্নওয়ানিচ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে, এই রোগ সম্পূর্ণ সেরে যাচ্ছে, এমন নয়। তবে দ্রুত রোগীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে। আর এটাকে যথেষ্ট বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন