করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৬১ লাখ ৭ হাজার ৩৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। একইসাথে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৫ জন হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই সংখ্যা জানা গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এবং নিউইয়র্ক টাইমস করোনার উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে। দুই মাসেরও কমসময়ে সংক্রমণের সংখ্যা ১ কোটি বেড়েছে। করোনার টিকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হলেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার প্রতিদিনই বাড়ছে আমেরিকায়।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনেকের সীমাহীন উদাসীনতা প্রদর্শনের খেসারত হিসেবে এহেন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। বড়দিন আর ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটির সময়ে অনেক মানুষ বিমানে চড়েছেন। স্বজনের সান্নিধ্যে হৈ-হুল্লুর করেছেন। স্টেট, সিটি প্রশাসন থেকে নানা কঠোরতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও আড়ালে-আবডালে পার্টিতে মিলিত হচ্ছে অনেকে।
এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ হুঁশিয়ারি হিসেবে বলা হচ্ছে যে, জানুয়ারির মধ্যে আরও এক লাখের বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হতে পারে করোনায়।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ৭২ লাখ আমেরিকান বিমানে চড়েছেন বলে ‘ট্র্যান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এডমিনিস্ট্রেশন’ (টিএসএ) জানায়। আগের বছরের একই সময়ে সে সংখ্যা ছিল ১৬.৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ৬৭ লাখ। ওই ৭ দিনের দৈনিক সংক্রমণের হার হলো- ১ লাখ ৭৮ হাজার এবং মৃত্যু হয়েছে গড়ে ২২৮০ জন করে। দৈনিক সোয়া লাখের অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন বলেও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘করোনা ট্র্যাকিং প্রজেক্ট’ জানায়।
এদিকে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম মানুষ টিকা পেয়েছেন গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনে। সে সময়ে ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার ১ কোটি ২৪ লাখ ডোজ বিভিন্ন স্টেটে পাঠানো হলেও প্রদান করা হয় মাত্র ২৮ লাখ জনকে। এ তথ্য ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ তথা সিডিসির।
ট্রাম্প প্রশাসনের টার্গেট ছিল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২ কোটি আমেরিকানকে প্রথম টিকা প্রদানের। এটি ব্যর্থ হয়েছে নানাবিধ অব্যবস্থাপনার জন্য-তা স্বীকার করেছে ফেডারেল প্রশাসন। অর্থাৎ আমেরিকানদের জীবনকে জিম্মি করে ট্রাম্পের লোকজন নির্বাচনে গণরায় পাল্টে দেওয়ার তামাশায় লিপ্ত রয়েছেন। ফাইজারের শীর্ষ কর্মকর্তা স্কট গোটলিব বারংবার সিডিসিকে তাগিদ দিচ্ছেন, যারা প্রথম টিকা নিয়েছেন, তারা যেন তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেন। অন্যথায় সেই টিকার কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট সময় পর দ্বিতীয় টিকা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে করোনা প্রতিরোধে।
এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের মতো কলরাডো, ক্যালিফোর্নিয়া ও ফ্লোরিডাতেও অধিক তেজি করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে বলে চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন। এটি দ্রুততম সময়ে সংক্রমিত হয়।
এদিকে, নিউইয়র্ক স্টেটেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। গত বছরের শেষ দিন মারা গেছে ১৬৬ জন। হাসপাতালে ভর্তি হন ৭৮৮৬ জন। স্টেট গভর্নর এ্যান্ড্রু ক্যুমো বলেছেন, বৃহস্পতিবার ১৩০০ রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ৭৭৬ জন। এই স্টেটে সংক্রমিত হবার হার ৭.৫২% এ উঠেছে। আর নিউইয়র্ক সিটিতে এই হার আরও বেশি-৯.৪১%। দু’সপ্তাহ আগেও তা ছিল ৫% এর কম। স্টেট গভর্নর ও সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। অন্যথায় পুনরায় লকডাউনর বিকল্প থাকবে না বলেও তারা উল্লেখ করেন।
১ জানুয়ারি নিউইয়র্ক স্টেটে সংক্রমণের মোট সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫,৬৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে আরও ৫০ হাজার জনেরও করোনার আলামত রয়েছে। এযাবত করোনায় নিউইয়র্ক সিটিতে ২৫,১৮৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ