গর্ভাবস্থা নারীদের খুবই স্পর্শকাতর সময়। এ সময় গর্ভবতী মায়ের যেমন শারীরিক সুস্থতার প্রয়োজন তেমনই দরকার সচেতনতাও। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক শরীরের যত্ন নিলে আসতে পারে একটি সুস্থ-সবল শিশু। অন্যাথায় ঘটতে পারে মা ও সন্তানের মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা। তাই সচেতনতার পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ ও সেবা।
গর্ভকালীন সময় নারীদের সচেতনতা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ না করার কারণে গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা ভ্রুণ বা শিশুর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০% এরও বেশি নারী প্রসবকালীন সময়ে একবারও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন না। বাংলাদেশে গর্ভকালীন জটিলতার করণে প্রতি ১ লাখে ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালে এই হার ছিলো ১ লাখে ১৭৪ জন এবং ক্রমান্বয়ে এটি বাড়ছে। এমন চিত্র আমাদের সত্যিই ভাবায়। বাংলাদেশে গর্ভবতী মায়েদের সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় তা হালো- প্রসবকালীন (রক্তক্ষরণ)- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, ভ্রুণের অনির্দিষ্ট অবস্থান, প্রি-ইক্লামপসিয়া, ইন্ট্রা ইউটেরিন গ্রোথ রেসট্রিকশন, ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতার মতো জটিলতা। এসব কারণে গর্ভবতী মায়ের কিংবা ভ্রুণ বা সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
গর্ভকালীন জটিলতার কারণে মৃত্যু হার কমানো, এ সব বিষয়ে চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে দুই দিনব্যাপি একটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন হয়। সৃষ্টি ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির সাথে যুক্ত হয়ে ৫৫০ জন আল্ট্রাসাউন্ড বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের জন্য এই কোর্সের আয়োজন করে জিই হেল্থকেয়ার। এর লক্ষ্য হচ্ছে নারীর স্বাস্থ্যের উন্নতি, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং জ্ঞান বিনিময়, বাংলাদেশে মাতৃকালীন ও ভ্রুণের সুস্থতার জন্য সেবার মান ও প্রমাণ ভিত্তিক সমাধানের উন্নয়ন। এছাড়াও ভ্রুণ সংক্রান্ত ওষুধ, জেনেটিক স্ক্রিনিং এবং প্রি-ইক্লামপসিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসার বিভিন্ন দিক থেকে উন্নত সাম্প্রতিক জ্ঞান ও দক্ষতায় সহায়তা করাও ছিলো এই কর্মসূচির লক্ষ্য, যাতে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে মাতৃকালীন ও শিশু মৃত্যু এবং রোগ কমানো যায়। আশা করা যায়, জিই-এর এই কর্মসূচি মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে জাতিসংঘকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে।
দুই দিনের এই কোর্সের প্রথম দিনে ভ্রুণের সঠিকভাবে বেড়ে উঠা ও কোন অস্বাভাবিকতা আছে কী না তা জানার জন্য গর্ভকালীন প্রথম ছয় মাস আল্ট্রাসাউন্ড-এর ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। দ্বিতীয় দিন, কীভাবে ভ্রুণ এর হার্ট ইমেজিং করতে হবে এবং ভ্রুণ এর হৃৎপিণ্ড কোন অস্বাভাবিকতা আছে কী না তা কীভাবে জানতে হবে সে বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের শেখানো হয়। ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান ও ভ্রুণের ইমেজিং-এ অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে কোর্সটি সাজানো হয়। অংশগ্রহণকারীরা আল্ট্রাসাউন্ড সম্পর্কে সর্বাধুনিক তথ্য ও এর আধুনিক ব্যবহার যেমন থ্রি-ডি ও ফোর-ডি আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং এবং গাইনীকোলজী ও ধাত্রীবিদ্যায় এর ব্যবহার সম্পর্কেও জানতে পেরেছে। ভ্রুণের কার্ডিয়াক ইভাল্যুয়েশনের থ্রি-ডি ও ফোর-ডি আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং এর ব্যবহার এবং গাইনীকোলজী ও ইনফার্টিলিটি বিষয়ে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
বাংলাদেশী চিকিৎসক ছাড়াও এতে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এই কোর্সটি আইএসইউওজি অনুমোদিত স্বনামধন্য ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের দ্বারা পরিচালিত হয়। যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক এরিস পাপাজিওরঘিউ, নেদারল্যান্ডস-এর অধ্যাপক কাটিয়া বিলরাডো, ভারতের ডা. প্রশান্ত আচার্য এবং ডা. মালা সিবালসহ বাংলাদেশের ফ্যাকাল্টি সৃষ্টি ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির সিইও এবং প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এবং শীর্ষস্থানীয় সোনোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ আখতার হোসাইন যৌথভাবে দুই দিনব্যাপি এই শিক্ষামূলক সেশন পরিচালনা করেন।
বিডি প্রতিদিন/২৩ ডিসেম্বর ২০১৭/হিমেল