এখন বর্ষাকাল। মৎস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায় বানের পানিতে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করছে অসংখ্য দেশি মা মাছ ও পোনা। নিষিদ্ধ চায়নাদুয়ারি জাল দিয়ে কিছু অসাধু মৎস্যজীবী নিধন করছেন এসব মাছ ও পোনা। এতে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণী। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, দেশের বৃহত্তম মিঠা পানির মাছের প্রধান উৎস চলনবিলে এখনো প্রায় ৪৪ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয়। উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, প্রতি বছর এ উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে উন্মুক্ত জলাশয় থেকে বছরে মাছ আহরণ করা হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন। বাকি মাছ পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে চাষ করা হয়। সাধারণত শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ বিলে দেশি প্রজাতি মাছের প্রজননকাল। আষাঢ় মাসের শুরুতেই এ বছর বিলে পানি আসায় এবং পানি বেশি থাকায় পোনা মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আশা করা হচ্ছে। মৎস্য প্রজননের এই সময়ে মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও মানছেন না কেউ। এসব পোনা ধরার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু মৎস্যজীবী। বানা, কারেন্টজাল, চায়নাদুয়ারি জালসহ বিভিন্ন অবৈধ ফাঁদ পেতে অবাধে নিধন করা হচ্ছে মা ও পোনামাছ। মাছ শিকারের এসব ফাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো কথিত চায়নাদুয়ারি জাল। এ জালে মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, সাপসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণী ধরা পড়ছে। সরেজমিনে দেখা যায় পৌর এলাকার উত্তর দমদমা, দক্ষিণ দমদমা, ফলিয়া, হিয়ালা, কয়া, চৌগ্রাম, ডাহিয়া, কলম, তাজপুর ও শেরকোল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় চায়নাদুয়ারিসহ অবৈধ ফাঁদ পেতে মাছ ও পোনা নিধনের উৎসব চলছে। যা প্রকাশ্যে বিক্রয় করা হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। উপজেলার ডাহিয়া বাজারের কৃষক আবুল মিয়া জানান, প্রতিদিন সকালে মাছ বাজারে চায়নাদুয়ারি জাল দিয়ে ধরা টাকি, শোল, কৈ, বোয়াল, ভেদা, শিং, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের পোনা বিক্রয় করছেন এক শ্রেণির অসাধু জেলে।
চলনবিল পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সভাপতি মো. এমরান আলী রানা বলেন, মাছ শিকারের সব ধরনের অবৈধ ফাঁদ বন্ধ করতে পারলে মা মাছ ও পোনা নিধন ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংসের হাত থেকে চলনবিলকে রক্ষা করা সম্ভব। এ জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনসচেতনতা জরুরি। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, চলতি অর্থ বছরের শুরুতেই ১৫ জুলাইয়ের আগে স্থানীয় বাজারগুলোতে ৮টি অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ৭৫০ মিটার চায়নাদুয়ারি ও প্রায় দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ ও পোড়ানো হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫ লাখ টাকা। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।