গাইবান্ধা সদর উপজেলায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতায় বিপুল পরিমাণ জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, শুধু আমন নয়, জলাবদ্ধতার কারণে বোরো মৌসুমেও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় হাজার হাজার বিঘা জমি।
স্থানীয়রা জানান, জলাবদ্ধতার কারণে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের ভেলাকোপার বিলের প্রায় দেড় শ বিঘা জমির রোপা আমন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে চারা। অনেক জমিতে ধান পানির নিচে পচে যাওয়ার পর ফের রোপণ করলেও তা বাঁচানো যায়নি। রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার দুই কিলোমিটার দীর্ঘ নালা খনন করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি সম্ভব হবে বলে বলছেন কৃষকরা। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এ বছর বড় ধরনের বন্যা না হলেও তিন দফা বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ৩৫৯ হেক্টর জমির আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুই দফায় ৪৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তৃতীয় দফায় ৯৬ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে দেখা যায়, ওই এলাকার প্রায় দেড় শ বিঘা জমির রোপা আমন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। দুই দফা রোপণের পরও ফসল রক্ষা সম্ভব হয়নি বলে জানান কৃষকরা। হালচাষ, সার-বীজ, শ্রমিকের খরচ জোগাড় করে তিন গুণ দামে চারা কিনে জমি লাগালেও বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তা নষ্ট হয়ে গেছে। চোখের সামনে ফসল পচে যেতে দেখে এলাকার কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
কৃষকরা জানান, প্রথম দফায় নিজেদের চারা দিয়ে বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করে রোপণ করলেও তা পানিতে তলিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় রোপণ করতে গিয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচ করতে হয়েছে। সময়মতো চারা না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমির জন্য খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এরপরও শেষ রক্ষা হলো না।
কৃষকদের অভিযোগ, শুধু আমন নয়, জলাবদ্ধতার কারণে বোরো মৌসুমেও তাদের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেলাকোপার বিল থেকে পূর্ব হরিপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গায় নালা খনন না হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ নেই। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় হাজার হাজার বিঘা জমি। এতে দুই থেকে তিন হাজার কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কৃষকদের দাবি, ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ নয়, স্থায়ী সমাধান চান তারা। রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের বর্গাচাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমি রোপণে বেছন, হাল-সার ও শ্রমিকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে পানি বেশি থাকায় ভাদ্রের শেষ সময়ে রোপণ করেছিলাম তবুও রক্ষা হয়নি। আরেক বর্গাচাষি মোবারক হোসেন বলেন, প্রতি বছর সামান্য বৃষ্টি হলেই এ এলাকার ধানখেত পানিতে তলিয়ে যায়। এবার দুই দফায় চারা রোপণ করেও শেষ রক্ষা হলো না। এ ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। ওই এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, নালা সংকটের কারণে প্রতি বছরই জমি পানিতে ডুবে যায়। স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় বারবার ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিকুল ইসলাম বলেন, তিন দফায় প্রায় ৪০০ হেক্টর আক্রান্ত জমির বেশির ভাগ রিকভার করা হয়েছে। সঠিক পরিমাণ নিরূপণের পর পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ আল হাসান বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে আমরা অবগত আছি। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত নালা খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।