ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে মোলানী চুনিহাড়ি নামক এক নিভৃত গ্রামে প্রতিবন্ধীদের স্কুল। স্কুল বলতে দুটি আধা পাকা টিনের ছাউনি। আর বাকি ঘর গুলো বাঁশের বেড়া তাও ভেঙে উদাম হয়ে গেছে বেশিরভাগ। রুমের ভেতরে রয়েছে কয়েকটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার। বেঞ্চে বসে ১৭/১৮জন ছেলে মেয়ে শিক্ষকের কথা শুনছে মনোযোগ দিয়ে।
১৫ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আমিনুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে ২০০৮ সালে একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূর্নবাসন কেন্দ্রটি চালু করেন। এখন এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী। ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে এই সকল শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করে আসছে কর্তৃপক্ষ। তারা বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদান করে আসছেন। মাঝে মাঝে স্থানীয় ব্যক্তিদের যে দান সহায়তা পাওয়া যায় তা দিয়ে চক, ডাস্টার, পেন্সিলসহ শিক্ষা উপকরণ কিনতেই শেষ হয়ে যায়।
স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, স্কুলে আসতে আমার অনেক ভালো লাগে। পড়ালেখা করে ডাক্তার হতে চাই। আমাদের স্কুলে আমার অনেক বন্ধু ও বান্ধবী আছে। শিক্ষকরা আমাদের সুন্দরভাবে পড়ালেখা সেখায়।
স্কুলের শিক্ষক গোলাম সারোয়ার বাবু বলেন, আমরা নিজ উদ্যেগে ও নিজ খরচে স্কুলটি পরিচালনা করছি। সমাজের বিত্তবান দানশীল মানুষ এবং সরকারি-বেসরকারি দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূর্ণবাসন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হবে। আলো ছড়াবে প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে, হাসি ফুটবে প্রতিবন্ধী শিশুর পিতামাতার মুখে এমনি প্রত্যাশা আমাদের।
স্কুলের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের এইখানে পুণর্বাসন কেন্দ্রে বেশি ছাত্র-ছাত্রী রাখার ব্যবস্থা নেই। আর বর্তমানে আমার নিজ বাসভবনে ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনুযায়ী শ্রেণীকক্ষ, টেবিল-চেয়ার, স্কুলের সীমানা প্রাচীর অর্থের অভাবে এখনো করতে পারছিনা।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদানের জন্য আমদের প্রতিষ্ঠানে কোন প্রজেক্টর ও কম্পিউটার নেই। শিশুদের চিকিৎসার জন্য আমাদের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থাকলেও ডাক্তার ও ঔষধের অভাব শিশুদের চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমিনুল ইসলাম নিজ উদ্যেগে প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটি একটি দৃষ্টান্ত। তার মত সমাজের সকল মানুষ যদি এই অসহায় প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে আলোকিত হয়ে উঠবে আমাদের সমাজ। আমরা একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূর্নবাসন কেন্দ্রটিকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার