দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা পৌর শহরের প্রধান সড়কসহ অন্যান্য সড়কগুলোর বেহাল দশায় পৌরবাসীর দুর্ভোগ চরমে। খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে এখন পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। দীর্ঘমেয়াদে এমন দশা বিরাজ করলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। জোড়াতালি দিয়ে কোনরকম সড়কটির বড় বড় গর্তে ইট বালু ফেলে সচল রাখার চেষ্টাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বছরের পর বছর মেরামত ও উন্নয়ন কাজ চলেই যাচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর দুর্ভোগ কমছেই না। দ্রুত সড়কটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছে পৌরবাসী।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ২১.০২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভাটিতে এক লাখ দুই হাজার মানুষের বসবাস। মোট সড়ক ১৪৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিন ভাগে তৈরি করা পাকা সড়কের আরসিসি, বিটুমিন কার্পেটিং ও ইটের সলিং ১১৬ কিলোমিটার। বাকি ৩১.৩৫ কিলোমিটার সড়কই কাঁচা। পাকা সড়কের ৫২ কিলোমিটার ভালো ছিলো। ২০১০ সাল থেকে ৩৮ কিলোমিটার সড়ক একদম নষ্ট। প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেই ভালো থাকা সড়কের ৫২ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৯ কিলোমিটার সড়কের মেরামত ও উন্নয়ন কাজের টেন্ডার হয় গত ১৪-১৫ অর্থবছরে। এরপর কাজ শুরু হয় ওই বছরের মে মাস থেকেই।
এদিকে শহরের মোক্তারপাড়া থেকে রাজরবাজার পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার প্রধান সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ শুরুর কথা থাকলেও গত ১৮ মে হাওরাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কোন রকমে গর্ত ভরাটের কাজ হয়। এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে সড়ক নির্মাণ কাজ। এসব সড়কের কাজ চলে বছরের পর বছর। কিন্তু ট্যাক্স বিল দেওয়ার পরও নগরবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।
অজহর রোডের পৌর বাসিন্ধা লিটন পন্ডিত বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার পর মেয়রকে ফোন দিলে কিছু খোয়াটোয়া দিয়ে গর্ত সাময়িক ভরাট করে দেয়। ১৮৮৭ সালে স্থাপিত নেত্রকোনা পৌরসভাটি বর্তমানে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হলেও কাঙিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না পৌরবাসী। শহরের প্রধান সড়কের বেহাল দশা দেখলেই মনে হয় এ দুর্ভোগ যেন দেখার কেউ নেই।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী দেব শংকর সাহা দেবু জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই আজ মোক্তার পাড়া থেকে শুরু করে ছোট বাজার, বড় রাজার, তেরী বাজার, রাজুর বাজার, নাগড়া আনন্দ বাজার, অজহর রোড, কুড়পারসহ প্রতিটি সড়কেরই ভগ্ন দশা। এতে পৌরবাসীর দুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ছোট-বড় গর্তে পানি জমে থাকে। যে কারণে সড়কটি দিয়ে হেঁটে যাওয়াই হয়ে পরে দুষ্কর। পৌর শহরে চলা মানেই শরীর জুড়ে ব্যাথা।
নেত্রকোনা আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, আগের মেয়াদের সাবেক মেয়র কাজ করে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে বর্তমান মেয়রের প্রায় দু'বছর হতে চললেও এখনো এসব সড়কের কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আমরা দেখতে পারছি না।
নেত্রকোনা জেলা সুজনের সভাপতি ও প্রেসক্লাব সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বলে আসলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না কেন- তা বোধগম্য নয়। পৌর কর্তৃপক্ষকে বললে তারা ঠিকাদারদের কথা বলেন। ঠিকাদাররা দায়ী করেন পৌর কর্তৃপক্ষকে। এমন টালবাহানা না করে সড়কটি দ্রুত নির্মাণ করলে পৌরবাসীকে এই দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এদিকে, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগের মেয়াদে কি হয়েছে কি হয়নি তা আমার ব্যাপার না। আমি এই মেয়াদে সড়ক বিভাগ থেকে প্রধান সড়কটি পৌরসভার আওতায় এনে কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী এক বছরের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করা হবে। সারা শহরে প্রায় ৩০ কেটি টাকার ড্রেন ও সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। আমি অনুরোধ করবো সড়কের পাশে যারা স্থাপনা নির্মাণ করেন, তারা যেন সড়কে সুরকি, বালু, পাথর না রাখেন। কারণ এতে সড়কের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়।
বিডি প্রতিদিন/৮ জুন, ২০১৭/ফারজানা