প্রাণঘাতি ব্যাধি সিলিকোসিসের (ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ) ঝুঁকিতে রয়েছে পঞ্চগড়ের প্রায় ৫০ হাজার পাথর শ্রমিক। এর অর্ধেকরই বেশি নারী। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের অভাবে এ রোগে মারাও যাচ্ছেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাথর ভাঙা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরাই সাধারণত সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। পাথরের ধূলিকণা নাক, মুখ এমনকি চোখের মধ্য দিয়ে ঢুকলে শ্রমিকরা এ রোগে আক্রান্ত হয়। পরে রোগের লক্ষণ হিসেবে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। এর শেষ পরিণতি হয় মৃত্যু। মুখে মাস্ক ব্যবহার না করেই কাজ করেন এসব পাথর শ্রমিক। ফলে ভূমি খনন করে পাথর উত্তোলন, পাথর নেটিং, শোটিং, ডেম্পিং ও ক্র্যাশিংয়ের সময় নাক মুখ দিয়ে পাথুরে ধূলাবালি শরীরে প্রবেশ করে। সচেতনতার অভাবে তারা বুঝতেও পারে না মরণব্যাধি ঢুকে পড়ছে শরীরের ভেতরে।
বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এলে তেতুঁলিয়া উপজেলা প্রশাসন ভয়াবহ সিলিকোসিস থেকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং শ্রমিকদের মাঝে মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, সিপাইপাড়া, তিরনই, খয়খেটপাড়া, সর্দারপাড়া, তেঁতুলিয়া, শালবাহান, বুড়াবুড়ীর বালাবাড়ী, ভজনপুর, দেবনগর, জগদল, গোয়ালঝাড়, ময়নাকুড়ি এলাকাসহ এই জেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক হাজার পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে সারা বছর পাথর ভাঙ্গানো হয়। এছাড়া এসব এলাকায় মাটি খনন করে পাথর উত্তোলন করা হয়।
এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রায় সবাই শ্বাসকষ্টে ভোগেন। সর্দি লেগেই থাকে বারোমাস। রাতে ঘুমাতে পারেন না।
ভজনপুর এলাকার পাথর শ্রমিক জুলেখা বেগম (৪৮) জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে পাথর ভাঙ্গার কাজ করেন তিনি । গত পাঁচ বছর ধরে শ্বাসকষ্ট ও মাথা ব্যথায় ভুগছেন। মাঝে মাঝে সর্দি আর জ্বর হয়। প্রতিদিন ১শ' টাকার ওষুধ খান তিনি।
বুড়াবুড়ি এলাকার জহিরুল ইসলাম (৫৫) জানান, জ্বর-সর্দি আর কাশি সব সময় আছে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। ৩/৪ বছর হয় গেইল। পালায় না। প্রত্যেকদিন ওষুধ খাচু।
সিভিল সার্জন ডা: পীতাম্বর রায় বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ক্রাসিং মেশিনে কাজ করার ফলে শ্রমিকদের শোষণযন্ত্রে দ্রুত পাথর ও ধূলিকণা প্রবেশ করে। ফলে তারা সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পর্যায়ক্রমে তারা প্রাণঘাতী অসুখে ভোগেন। দ্রুত স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে এ অঞ্চলের বিপুল পাথর শ্রমিক অদূর ভবিষ্যতে প্রাণঘাতী নানা রোগে আক্রান্ত হবে।
এদিকে শ্রমিকদের সিলিকোসিস রোগ সমন্ধে সচেতনতা ও তাদের মাঝে মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পরই শ্রমিক ও পাথর ব্যবসায়ীদের নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন করা হবে। এসময় শ্রমিকদের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হবে।
তেতুঁলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সিলিকোসিস একটি ভয়াবহ রোগ। এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা ও মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঈদের পরপরই এসব কার্যক্রম শুরু হবে।
বিডি প্রতিদিন/১০ জুন, ২০১৭/ফারজানা