বৈচিত্র্যময় পাহাড় এখন এখন মৃত্যুপুরী । চারদিকে বেশে আসছে কান্নার শব্দ। আতঙ্কে ঘুম হারা পাহাড়ের মানুষের। দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। স্বজন হারা মানুষগুলোর আত্মনাদে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশও। একটা সময় পাহাড়কে ঘিড়ে যে মানুষগুলো দেখে ছিল বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সে পাহাড় কেড়ে নিয়েছে শত শত প্রাণ।
জানা গেছে, রাঙামাটিতে এখন স্বজন হারা পরিবারের সংখ্যা ২০টি। বৃষ্টি থামলে সবাই ছুঠে যাচ্ছে পাহাড়ের ধ্বংসস্তুপে। এখন রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি আসার জন্য মূল সড়কের বাইরেও দুটি বিকল্প সড়ক রয়েছে। কিন্তু তিনটি সড়কই পাহাড় ধসের কারণে বন্ধ। গত মঙ্গলবার ভোর থেকে গতকাল বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলার অন্তত ৩০টি স্থানে পাহাড়ধসের খবর পাওয়া গেছে। এই ৩০টি স্থানের বাইরে আরও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১৪৫টি পাহাড় ধসের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি রাঙমাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শালবন এলাকায় ১০০ মিটার সড়কে ৩০ ফুট জায়গা পাহাড়ের নীচে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১০০ মিটার রাস্তা ৪০থেকে ৫০ ফুট গভীরে তলিয়ে গেছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন রাস্তা এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৃষ্টি হলে ক্যাম্পের পাহাড় থেকে পুণরায় পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে। এই ক্যাম্পের পাহাড়ে রয়েছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর বিশাল টাওয়ার। এই সড়কের উপর পাহাড়ের মাটির স্তুপ সড়ানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রাঙামাটি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজন রাকিবুল হাসান জানান, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়া এলাকা পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে ঘাগড়া এলাকা থেকে মানিকছড়ি পর্যন্ত বেশ কিছু অংশে সড়ক ভেঙ্গে পাহাড়ে নিচে চলে গেছে। এসব সড়ক সংষ্কার করা সম্ভবনা তবে বিকল্প সড়ক তৈরি করা যাবে।
অন্যদিকে রাঙামাটি শহরে গত ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার পানি সংকট । সেই সাথে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। শহরের সবকটি তেলের পাম্প ও খুচরা তেলের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এসবে তথ্য জানতে গঠন করা হয়ে বিশেষ কমিটি।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, সমুদ্র নিম্নচাপ চলছে। আমরা জানতে পেরেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩নং সদরক সংকেত দেওয়া হয়েছে। সে জন্য হালকা ও মাঝাড়ি কিংবা ভাড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর বৃষ্টি পাত হলে পাহাড় ধসের সংখ্যাও পাড়তে পারে। তার জন্য সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।
এদিকে, ঘরহারা মানুষগুলোর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র। এছাড়া রাঙামাটি বিভিন্ন স্কুল,কলেজ, বিহার, বেতার কেন্দ্র, পাসপোর্ট অফিস, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তবে আশ্রয় কেন্দ্রছাড়া সাধারণ মানুষগুলোর মধ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার ও পানি সংকট।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার