কিশোরী সোনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার ঘটনায় অবশেষে মামলা নিয়েছে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ। ১৪ অক্টোবর দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ এর (ক) ধারায় মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থল এবং সোনিয়ার স্কুল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ। এখন পর্যন্ত আসামীদের কাউকে আটক করেনি পুলিশ।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির মেধাবি শিক্ষার্থী রহিমা আক্তার সোনিয়া গত ১০ অক্টোবর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ইউডি মামলা করে। পরে সোনিয়ার মা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দিলে অভিযোগ পত্রটি অজ্ঞাত কারণে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করছিল না পুলিশ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে ক্ষোভ, প্রতিবাদ এবং আসামীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি অব্যাহত থাকে।
আসামীদের গ্রেফতার এবং মামলা রেকর্ডের ব্যাপারে পুলিশের নির্লিপ্ততা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। সোনিয়ার পরিবারের লোকজন জানান, রাতারাতি আসামীদের সাথে মোটা অংকের লেনদেন হয় পুলিশের। অন্যদিকে প্রধান আসামী পঞ্চগড়-২ আসনের সাংসদ নূরুল ইসলাম সূজনের আত্মীয় হওয়ায় সেদিক থেকেও পুলিশের উপর চাপ আছে বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
এসব বিষয় নিয়ে তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সরেষ চন্দ্রের আগের দেয়া বক্তব্যের সাথে বর্তমান বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি। প্রথমে একটি ইউডি মামলা হয়েছিল। পরে ইউডি মামলা খারিজ করার ব্যাপারে আইনি জটিলতা ছিল। আমরা হাসপাতালের রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিলাম। মামলার বাদী সোনিয়ার মা সেলিনা আক্তার জানায়, ১৩ তারিখ রাত ১ টা পর্যন্ত পুলিশ আমাদের থানায় বসিয়ে রাখে। রাতে মামলা রেকর্ড করেনি। পরে ১৪ তারিখ দুপুরের দিকে মামলা রেকর্ড করা হয়।
তবে মামলা রেকর্ড সংক্রান্ত বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ সরেষ চন্দ্রের বক্তব্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। শুরুতে এ বিষয়ে তিনি গনমাধ্যমকে জানান, আইনগতভাবেই আমরা লাশ উদ্ধার করি। পরে একটি ইউডি মামলা করা হয়। এখন নতুন করে মামলা নেয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতা রয়েছে। তাহলে ইউডি মামলাটিকে খারিজ করে তারপর মামলা নিতে হবে। কিন্তু ইউডি মামলা খারিজ করার আইন নেই। তবে যে মামলাই হোক এ ব্যাপারে পুলিশ যথাযথ ভূমিকাই পালন করছে।
মামলা রেকর্ডের পর এই কর্মকর্তার বক্তব্যে অসংলগ্নতা পাওয়া গেছে। আইনি জটিলতা থাকার পরেও তিনি কিভাবে মামলা রেকর্ড করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা ইউডি মামলার আইন পড়েছি। মামলা নেয়া যাবে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির মেধাবি শিক্ষার্থী রহিমা আক্তার সোনিয়া ১০ অক্টোবর সকালে সোনিয়া তার ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
জানা গেছে, ৩ মাস আগে কালারাম জোত গ্রামের পাথর শ্রমিক জাহেরুল ইসলামের কন্যা সোনিয়ার তেঁতুলিয়ার মৃত সোলায়মান আলীর ছেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওয়ার্ড বয় রাজনের (৩২) সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর রাজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সোনিয়ার। এর পর রাজন বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করতো। আর ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করতো মোবাইলে। এসব প্রতারণায় সহযোগিতা দিতো রাজনের বন্ধু তেঁতুলিয়ার বাশির উদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান (৩৪)। বন্ধু আতিকও এক পর্যায়ে সোনিয়াকে ধর্ষণ করে। এদিকে কিছুদিন পর সোনিয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে রাজন এবং আতিকের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রাজন এবং আতিক স্কুল যাওয়ার পথে সোনিয়াকে পর পর কয়েকবার রাজনের বাড়িতে যেতে বাধ্য করে। রাজনের সাথে শারিরিক মেলামেশা না করলে ধর্ষণের ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা।
সোনিয়ার মা বিষয়টি জানার পর রাজন ও আতিকের অভিভাবকদের জানালে, তারা অন্যত্র সোনিয়ার বিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়। বিয়ের সময় কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানায় তারা। এসব জেনে ৯ অক্টোবর রাজন এবং আতিক আবারো সোনিয়ার ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
১০ অক্টোবর সকালে সোনিয়া তার ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এসময় সোনিয়ার একটি ডায়রি উদ্ধার করে পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/১৪ অক্টোবর, ২০১৭/ফারজানা