হবিগঞ্জের হাওরগুলোতে পুরোদমে চলেছে রোপা ও বোনা আমন ধান কাটা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হওয়ায় আনন্দিত এ জেলার কৃষকরা। গত বোরো মৌসুমে দুই দফা আগাম বন্যার ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। আমন ধানকে ঘিরে কৃষাণ-কৃষাণী দেখছেন সোনালী স্বপ্ন।
সরেজমিনে ভাটি বাংলার আজমিরীগঞ্জের জলসুখা হাওরে দেখা যায়, সকাল থেকেই মাঠে ধান কাটার কাজে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। শীত মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় তারা দিনভর চালিয়ে যাচ্ছেন কাজ। কথা হয় জলসুখা গ্রামের কৃষক আইবুর মিয়ার। তিনি বলেন, বর্তমানে পুরোদমে চলছে ধান উঠানোর কাজ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেক ভাল হয়েছে, তাই তিনি আনন্দিত।
তিনি আরো বলেন, আমনের মৌসুমে ধান কাটা শ্রমিকেরও অভাব হয় না। স্থানীয় শ্রমিক ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিকরা এসেছেন এখানে কাজ করতে। ধান কাটার শ্রমিক আওলাদ মিয়া বলেন, আমরা ভোলা জেলা থেকে এখানে ধান কাটতে এসেছি। বোরো মৌসুমের তুলনায় আমন মৌসুমে ধান কাটতে পরিশ্রম কম হয়। তাছাড়া প্রাপ্য মুজুরীতেও সন্তুষ্ট তিনি।
বানিয়াচংয়ের কৃষক আনছার আলী বলেন, বানিয়াচংয়ের সবক’টি হাওরেই আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে বোনা আমন পুরোদমে শুরু হলেও রোপা আমন কাটতে আরো কয়েকদিন লাগবে। কারণ এই ফসল ফলতে একটু সময় বেশি লাগে।
তিনি আরো জানান, অন্যান্য বছর প্রতি ২৮ শতকে তার জমিতে ৭ থেকে ৮ মন ধান হলেও, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় প্রতি ২৮ শতকে ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১১ মন। চলতি সময়ে ধানের দামেও সন্তুষ্ট তিনি।
আজমিরীগঞ্জের পিরিজপুর গ্রামের রূপালী মিয়া বলেন, তার চাষ করা ধান পুরোদমে কাটা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছর সরকারি নির্ধারণ করা দামের প্রতি খেয়াল না করে মহাজনরা কম দামে ক্রয় করতেন। তবে এবার শুরুতেই ৮শ’ টাকা দরে ভেজা ধান বিক্রি চলছে। এই দাম আরো বাড়তে পাড়ে বলে তিনি আশাবাদী।
হিলালপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের এলাকায় বোনা আমনের চেয়ে রোপা আমনের ফলন ভাল হয়। তাই ওই এলাকার অধিকাংশ কৃষকই রোপা আমন চাষ করেছেন। তিনি জানান, রোপা আমন প্রতি ২৮ শতাংশে তারা পাচ্ছেন কম করে হলেও ১৩ থেকে ১৫ মন ধান। এবার দামও ভাল। তাই গত বোরো মৌসুমের ক্ষতি এবার পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।
হবিগঞ্জ জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, বোনা আমন পুরোদমনে কাটা চললেও রোপা আমন কিছু কিছু স্থানে শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই রোপা আমনও পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। তবে বোনা আমনের চেয়ে রোপা আমনের ফলন প্রায় দেড়গুণ হয়েছে এ বছর।
তিনি আরো জানান, গত বছর জেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৪ হাজার হেক্টর ধরা হলেও এর চেয়ে অনেক কম জমি রোপন করা হয়েছিল। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৫০০ হেক্টর।
অপরদিকে বোনা আমনের লক্ষমাত্রা ছিল ২৭ হাজার ১শ’ হেক্টর। তবে এই ফসল চাষ হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে। তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমের বোনা আমন ৩০ শতাংশ এবং রোপা আমন ৪৫ শতাংশ কাটা হয়েছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ প্রতিদিনই ধান কাটার খোঁজ খবর রাখছে।
বিডি প্রতিদিন/২৮ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল