১৯৭১ এর ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনাকে পাকিস্তান মুক্ত করে স্বাধীন পতাকা উড়িয়েছিলো বীর সেনারা। টাইগার খ্যাত প্রয়াত কোম্পানি কমান্ডার আবু সিদ্দিক আহমদের নেতৃত্বে সেদিন তুমুল সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিলো। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা মরণপণ লড়াই করে নেত্রকোনাকে মুক্ত করেন। সেদিন শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা আবু খাঁ, আব্দুস সাত্তার ও আব্দুর রশিদ।
মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর ৩ দিক থেকে পাক সেনা ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লাগাতার যুদ্ধ চালিয়ে যায়। রাজুরবাজার, চকপাড়া, সাতপাই, কাটলী, নাগড়া, কৃষিফার্ম এলাকা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত অবিরাম যুদ্ধ চালান। একসময় পাক সেনারা ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
কিন্তু এতদিন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে ছিল শহীদদের স্মৃতিফলকটি। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার কালেক্টরেট প্রাঙ্গণেই স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে গত বছরের ২১ ফ্রেরুয়ারি 'প্রজন্ম শপথ' নামে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।
তবে জেলায় অন্তত ১৫ থেকে ১৮টি বধ্যভূমি অরক্ষিত অবস্থায়ই পড়ে আছে এখনো। যেগুলোর সঠিক হিসাবও কেউ বলতে পারছে না। শুধু সংরক্ষণের অভাবে জায়গাগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এগুলোকেও চিহ্ণিত করে সংরক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, খন্দকার আনিছুর রহমান, আলী আহমদ আইয়ূবসহ সুধীজনরা।
ইতিহাস সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেত্রকোনা জেলার ৩ হাজার ৪২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। তার মধ্যে মুসলিম যোদ্ধা ২ হাজার ৯০৮ জন এবং হিন্দু ছিলেন ৪২৮ জন, আদিবাসী ছিলেন ৯১ জন। কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন ৩৪ জন। শহীদ হয়েছেন মোট ৬৬ জন।
বিডি প্রতিদিন/৯ ডিসেম্বর, ২০১৭/ফারজানা