বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, জিয়াউর রহমানের শিক্ষাদর্শন ও কর্মসূচি নিয়ে পিএইচডি গবেষণা হতে পারে। তিনি দেশের মানুষকে সুশিক্ষা দেওয়ার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে যারা নিজেদেরকে জনগণের দল বলে মনে করে তারা কেন জাতিকে পরিকল্পিতভাবে মূর্খ করে রাখতে চেয়েছিলো?
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল কর্তৃক আয়োজিত ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শিক্ষাদর্শন ও কর্মসূচি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মঈন খান বলেন, বিগত সরকার ১৭ বছরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। গ্রাম-গঞ্জের স্কুল কিন্তু সরকারি হয়েছে ঠিকই। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যায় না। এজন্য তারা দায়ী নয়। সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার হয়তো চেয়েছিলো জাতিকে মূর্খ করে রাখতে। অথচ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেশের শিক্ষার উন্নয়নে অসংখ্য অবদান রয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালু করেছিলেন। যার সুফল দেশবাসী পেয়েছে।
তিনি বলেন, শহিদ জিয়া উন্নয়ন উৎপাদনের কথা বলতেন। তিনিই প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়ে চিন্তা করছিলেন। তিনি বাস্তবমুখী শিক্ষার কথা বলেছিলেন। তার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি দেশের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। জাতির জীবনে এমন কোনো খাত যেখানে তার অবদান নেই।
সেমিনারে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল।
এসময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশ ও মানুষের জন্য যে অবদান তৈরি করার কথা সেটি জিয়াউর রহমান করেছেন।মানুষকে স্বনির্ভর করতে তার ছিলো মহান পরিকল্পনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন কিন্তু কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। তিনি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কথা শুনেছেন। যা গণতন্ত্রের নমুনা ও বৈশিষ্ট্য। তিনি শিক্ষাকে যে গুরুত্ব দিতেন সেটি তার কার্যক্রমেই পরিস্কার হয়েছে। গণমুখী শিক্ষা প্রবর্তন করেছিলেন। যাতে উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্যে তিনি নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার শিক্ষা চিন্তা ছিলো দূরদর্শী। কিন্তু শেখ হাসিনা ছিলেন তার ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্ট।
‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শিক্ষাদর্শন ও কর্মসূচি‘ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন সাদা দলের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, সেমিনার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এম এ কাউসার।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন বাস্তববাদী ও ভবিষ্যতমুখী নেতা এবং জাতি পুনর্গঠনের সাহসী পথপ্রদর্শক। জাতির ক্রান্তিকালে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া জাতিকে নতুন আত্মপরিচয় ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করেন। উৎপাদনমুখী রাজনীতি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক জিয়াউর রহমান ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার।
তিনি বলেন, একজন শিক্ষাবান্ধব প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমান শিক্ষা ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন। তিনি সরাসরি কোনো বিশদ শিক্ষাদর্শন রচনা করেননি। তবে তার শাসনামলে গ্রহণ করা শিক্ষানীতিমালা, তার বক্তব্য এবং তার শিক্ষা বিষয়ক কর্মসূচি ও কর্মপন্থার মাধ্যমে তার শিক্ষাচিন্তা ও দর্শন স্পষ্ট হয়।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, গত ১৭ বছরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এমন ক্রান্তিকালে আমরা প্রত্যাশা করি আগামীর বাংলাদেশ হবে শিক্ষা নির্ভর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ৩১ দফা রুপরেখা ঘোষণা করেছেন সেখানে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সেমিনারে উপস্থিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেওয়ার বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানান তিনি।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম সোহাগ আউয়াল, সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক আক্তার হোসেন খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব এটিএম আব্দুল বারী ড্যানিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ডিন, প্রভোস্টসহ পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ