রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পার্কিংয়ে একটি প্রাইভেট কার থেকে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় তিনটি সিসি ক্যামেরার প্রায় ৩২ ঘণ্টার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। ফুটেজে ওই সময়ের মধ্যে পার্কিংয়ে থাকা গাড়িটির কাছে বাইরে থেকে কাউকে যেতে দেখা যায়নি। আবার গাড়ি থেকেও কাউকে বের হতে দেখা যায়নি বলে গতকাল জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা একটি প্রাইভেট কার থেকে জাকির (২৪) ও মিজান (৩৮) নামে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়। দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গিয়েছিল। তাদের হত্যা করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। পরদিন মঙ্গলবার গাড়ির চালক জাকিরের বাবা আবু তাহের রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।
জানা যায়, প্রাইভেট কারটির মালিক জোবায়ের আল মাহমুদের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায়। তিনি জানান, তিন মাস ধরে জাকির তার গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গত শনিবার ওই গাড়িতে করে জোবায়ের তার স্ত্রীর বড় ভাইকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে যান। এ সময় গাড়িতে জাকিরের সঙ্গে তার বন্ধু মিজানও ওঠেন। মিজান তার প্রতিবেশী এক শিশুকে হাসপাতালটি থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। রবিবার ভোরে বিমানবন্দর থেকে তারা গাড়ি নিয়ে হাসপাতালটিতে পৌঁছান। এরপর মিজান তাকে মালিবাগ থেকে নোয়াখালীর একটি বাসে তুলে দেন। বিদায় দেওয়ার সময় জাকির বলেছিলেন- বেলা ১১টায় রোগীকে ছাড়পত্র দেবে, ততক্ষণ তারা দুজন গাড়িতেই ঘুমাবেন। কিন্তু বেলা পৌনে ১১টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি জাকিরকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও পাননি। সোমবার দুপুরে তাদের লাশ উদ্ধার হয়।
পুলিশ জানায়, পার্কিংয়ে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়- রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায় গাড়িটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করে। তারপর আর বের হয়নি। এই সময়ের মধ্যে ওই গাড়ির কাছে বাইরে থেকে কাউকে যেতেও দেখা যায়নি। পরে লাশ উদ্ধারের সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় অনেক সময় ধরে চালু থাকার কারণে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ব্যাটারির চার্জও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে- গাড়িটি থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস বের হয়ে কার্বন মনোঅক্সাইড তৈরি হয়। আবার দীর্ঘ সময় এসি চালু থাকায় সেখান থেকেও অতিমাত্রায় কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস বের হয়ে থাকতে পারে। এই গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে তাদের শরীরে প্রবেশ করে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আর দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ির মধ্যে বদ্ধ অবস্থায় থাকার কারণে গরমে এক দিনেই তাদের শরীর অস্বাভাবিক ফুলে যায়। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে তারা ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।