রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। মামলায় গ্রেফতার হওয়া চারজনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। একই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই এসআই ও ছয় কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তারাগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন—তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বারাপুর গ্রামের এবাদত হোসেন (২৭), আক্তারুল ইসলাম (৪৫), বুড়িরহাট চাল্লিয়ারপাড় গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে ডিম রবি (৩৩) এবং কুর্শা ইউনিয়নের পশ্চিম রহিমাপুর খানসাহেব পাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে ডেঙৃ (২২)।
মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
দায়িত্বে অবহেলার কারণে বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন—তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, এসআই সফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, ধিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়।
এ বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম জানান, ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
এড় আগে গত শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে আটক করে স্থানীয় জনতা। প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতলে চোলাই মদ উদ্ধার করে তারা। একটি বোতল খুলে ঘ্রাণ নেওয়ার পর দুই ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করলে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
এ সময় অজ্ঞান করে ভ্যান চুরির অভিযোগে তাদের বটতলা থেকে পিটিয়ে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে তারা অচেতন হয়ে পড়লে সেখানেই ফেলে রাখা হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রূপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আহত প্রদীপ দাস রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
নিহত রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে ৫০০–৭০০ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ১১ আগস্ট সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে।
তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহত রূপলালের পরিবারকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক