আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এই সময়ে চরম অপুষ্টির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে ১৬ লাখ শিশু। দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর মানুষ এই সংকটে পড়তে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরসহ দেশের ৩৬ জেলার ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির অবস্থা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) ও জাতিসংঘের তিন সংস্থা।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘের শিশু তহবিল ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যৌথভাবে ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় বছরের শেষ আট মাসে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘আইপিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি না, সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কমানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণ করা জেলার ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। যে প্রাথমিক কারণগুলো এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু বিপর্যয়, তহবিলের অভাব, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং খাদ্যবৈচিত্র্যের অভাব।
অনুষ্ঠানে আইপিসি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এফএও এবং ডব্লিউএফপির ফুড সিকিউরিটি ক্লাস্টার বাংলাদেশের সমন্বয়কারী মো. মঈনুল হোসেন রনি এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের নিউট্রিশন ক্লাস্টার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
আইপিসির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের পরিচালক (মানবকল্যাণ) মোস্তাক হোসেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে খাদ্যঘাটতি, অপুষ্টি ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে মূল্যায়ন করা হয়েছে পাঁচটি ফেজ বা ধাপে। ধাপ ১ : সর্বনিম্ন বা স্বাভাবিক, ধাপ ২ : চাপে থাকা, ধাপ ৩ : সংকটে থাকা, ধাপ ৪ : জরুরি অবস্থা এবং ধাপ ৫ : দুর্ভিক্ষ। এতে বলা হয়েছে, দেশের ৩৬ জেলায় বসবাসরত ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ বছর কোনো জেলায় ধাপ-৫ অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি, দেখা যাওয়ার আশঙ্কাও নেই।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ধাপ-৪ বা জরুরি অবস্থাতেও ছিল না কোনো জেলার জনগোষ্ঠী। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় জরুরি অবস্থা দেখা দিতে পারে। এ সংখ্যা তিন লাখ ৬০ হাজারের বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ৩৬টি জেলার মধ্যে ১৬টি জেলার (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ) এক কোটি ৫৫ লাখ মানুষ খাদ্যসংকট বা ধাপ-৩-এ ছিল। আর মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩টি জেলার এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্যসংকট বা ধাপ-৩-এর সম্মুখীন হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার। কক্সবাজারের যে অংশে রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে ও যে অংশে নেই দুই এলাকার স্থানীয় লোকজনও খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে কক্সবাজারের মানুষ, বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের জনসাধারণ। এই জেলার ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন। কক্সবাজার ও ভাসানচর মিলিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্যসংকট ও জরুরি অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত খাদ্যসংকটে থাকা নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কিছুটা কমেছে। এ চার জেলা ধাপ-২-এ উন্নীত হয়েছে। অপরদিকে ধাপ-২-এ থাকা বাগেরহাট এবার খাদ্যসংকটের তালিকা অর্থাৎ ধাপ-৩-এ ঢুকেছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনসহ দুর্যোগের কারণে ওই সব জেলায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, আইপিসি বিশ্লেষণের ফলাফল বিশেষ করে গ্রামীণ ও উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ, যাদের জীবিকা কৃষি ও মৎস্য খাতের ওপর নির্ভরশীল। আমরা সবাই মিলে খাদ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে, পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্যতা বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে যেতে চাই। দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের দ্রুত ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যেন কেউ পিছিয়ে না থাকে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        