সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পরিণতি আগের মতোই হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো অনুপস্থিত উল্লেখ করে দলটির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বিকালে নির্বাচন ভবনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে চায় বলেও জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমরা লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথা বলেছি, যেটা এখন অনুপস্থিত এবং সিইসিকে আমরা বলেছি যে, আপনি যদি মনে করেন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবেন তাহলে আপনি নির্বাচন দেন। আর যদি আপনি মনে করেন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবেন না, তাইলে আপনি ঝুঁকি নেবেন না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারার পরিণতির আশঙ্কাও সিইসির কাছে তুলে ধরেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ নেতা বলেন, যদি আপনি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না দিতে পারেন, তাহলে বিগত নির্বাচন কমিশনের পরিণতি আপনাকে ভোগ করতে হবে। আপনার ‘গলায় গামছা’ এবং ‘মাজায় রশি’ লাগতে পারে। এ অবস্থাটা আপনি মনে রাখবেন। এটা মনে রেখেই আপনি নির্বাচনের দিকে যাবেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন প্রেসিডিয়ামের সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম।
আগে স্থানীয় নির্বাচন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, আমাদের মূল যে দাবিটা ছিল সেটা হলো যে ঐকমত্য কমিশনের জুলাই সনদের জন্য যে আলোচনা হচ্ছে, যাতে আগামী নির্বাচনটা এই জুলাই সনদের ভিত্তিতে হয়। তিনি জানান, ৫৩ বছর বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়েছে সমস্যা ছিল নির্বাচন পদ্ধতিতে। এ নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে পিআর পদ্ধতি নির্বাচন ব্যবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে হতে হবে, যাতে জনগণের শতভাগ ভোটের মূল্যায়িত হয় এবং নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়। এটা ছিল আমাদের মৌলিক দাবি। আর আমরা বলেছি, স্থানীয় নির্বাচন তো আগে হওয়া প্রয়োজন। লেভেল প্লেইং ফিল্ড কতটুকু আছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সভ্য হয়েছি এটা যাতে প্রমাণ হয়। গাজী আতাউর জানান, ঐকমত্য কমিশন স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আইন উপস্থাপন করতে না পারাও একটি ব্যর্থতার বিষয়।
সনদের আগে তফসিল নয়, যেন তেন নির্বাচন নয় : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, আমরা (সিইসিকে) স্পষ্ট বলেছি, জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি হওয়ার আগে, (সনদ) ডিক্লেয়ার হওয়ার আগে আপনি তফসিল ঘোষণা করবেন না। সেটা আমরা ক্লিয়ার বলে দিয়েছি।
প্রতি কেন্দ্রে সেনা চায় দলটি : প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন দলের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ৭টি দাবি সিইসির কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান। সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনি কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্বশীল এবং দলনিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের গৌরব সেনাবাহিনীকে শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নয় বরং প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সেনা সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদের আলোকে ও সংস্কারের ভিত্তিতে জাতীয় এবং সব স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। শতভাগ জনমতের মূল্যায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদ গঠনের লক্ষ্যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ও তার সব দোসর, সহযোগী দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, টেন্ডারবাজ ও খুনিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। এই সাত দফা আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। সিইসি আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘আমি দেখব কীভাবে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়’ বলেন আশরাফ আলী আকন।