দুদক সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে খসড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়া অধ্যাদেশটি বিদ্যমান আইনের চেয়ে কিছুটা উন্নত সংস্করণ এবং এতে দুদক সংস্কার কমিশনের কোনো কোনো সুপারিশের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাদ দেওয়া বা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, যা হতাশাজনক। টিআইবি মনে করে, একটি সত্যিকারের স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক যাতে তার কার্যক্রম পরিচালনা এবং জনআস্থার সংকটে নিমজ্জিত অবস্থা থেকে উত্তরণ লাভ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত দুদক সংস্কার কমিশনের প্রণীত প্রতিবেদনের সুপারিশমালার সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশ প্রণয়নের জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশনার নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও কমিশনের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংস্কার কমিশন ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করেছিল। সরকার পর্যালোচনা অংশটি, বা দুদকের দায়িত্ব পালনে সাফল্য-ব্যর্থতার ষান্মাসিক পর্যালোচনার সুপারিশটি প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থাৎ যে কারণে জন্মলগ্ন থেকে দুদক ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষের হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, সরকার সে অবস্থার পরিবর্তন চাইছে না। তিনি বলেন, অধ?্যাদেশের মাধ্যমে দুদক আইনের সংশোধন, দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার মধ্যে আশুকরণীয় হিসেবে নির্ধারিত বিষয়ের অংশবিশেষ মাত্র।
অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, জনবল নিয়োগে স্বচ্ছতা ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবজনিত অব্যবস্থাপনা ও অকার্যকরতা, অভ্যন্তরীণ অনিয়ম-দুর্নীতি এবং দুদকের ম্যান্ডেট সংশ্লিষ্ট সম্পূরক আইনি নীতিকাঠামো-সংক্রান্ত সুপারিশগুলো ইতোমধ্যে সরকার ও দুদকের সমন্বিত উদ্যোগে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ও সুযোগ ছিল। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায়, হতাশা পুঞ্জীভূত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লিখিত অধ্যাদেশের উদ্যোগ কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও, বাস্তবে উদ্বেগ ও হতাশা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আর বাছাই কমিটিতে সংসদে বিরোধী দলের প্রতিনিধি মনোনয়নের এখতিয়ার বিরোধী দলের নেতার পরিবর্তে অযাচিতভাবে স্পিকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবে সরকারি দলের প্রভাব জোরদার করার অশুভ প্রয়াস ছাড়া কিছুই না। একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী ও সুশাসনের কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বাংলাদেশি নাগরিককে কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়নের দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির ওপর ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হলেও, তা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়েছে। তা ছাড়া সরকার শর্টলিস্ট করা প্রার্থীদের নাম প্রকাশের প্রস্তাবিত বিধানটিও বাদ দিয়ে নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।