জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে দেশে নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণহত্যার বিচারের রোডম্যাপ দিয়ে বিচারকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দ্রুত নির্বাচন চাই। তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে।
গতকাল বিকালে রংপুর পর্যটন মোটেলে রংপুর বিভাগের আট জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পদপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে নানামুখী সংকট তৈরি হয়েছে। পতিত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করছে। নানামুখী সংকটের জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আমাদের দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করে এক জায়গায় থাকতে হবে। কেউ যদি মনে করে এককভাবে সব নেতৃত্ব দেবে, সরকার গঠন করে ফেলবে, এটি সম্ভব হবে না। দেশে সব পক্ষের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য না থাকলে এককভাবে সরকার গঠন ও সংসদ টিকিয়ে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব হবে না। জনগণের ন্যূনতম আকাঙ্ক্ষা, সংস্কার, বিচারের দাবিকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে সেটি টেকসই হবে না।
তিনি বলেন, টেকসই স্থিতিশীল পরিবর্তনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার, অল্প কিছু জায়গায় সংবিধান সংস্কার করে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সেই জায়গায় বাধা এলে, কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে গড়িমসি করা হলে, সরকার ও বাধাদানকারীকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।
জোটের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, পুরোনো দলগুলোর প্রতি জনগণের অনীহা রয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গ্রুপ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। গত ১৬ বছর অনেকে জনগণের পক্ষে সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারেনি। বিভিন্ন দলের অতীত কলঙ্ক রয়েছে। বিএনপির শাসনামল নিয়ে দুর্নীতির অনেক সমালোচনা রয়েছে। ৫ আগস্টের পরও তাদের দল নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। জামায়াতের ঐতিহাসিকভাবে দায়ভার রয়েছে। গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী তারাও সমালোচিত। তাই কোনো ধরনের জোটে গেলে অবশ্যই ভাবতে হবে। জোটের বিষয়ে নীতিগত জায়গা থেকে যারা জুলাই সনদ, বিচার, সংস্কারের প্রশ্নে আমাদের কাছাকাছি ভূমিকায় রয়েছে, তাদের বিষয়ে চিন্তা করব।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের দুটি প্রস্তাব দেওয়ার দরকার ছিল না। দ্বিতীয় প্রস্তাব একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম প্রস্তাবে আমরা সমর্থন দিচ্ছি কিছুটা সংশোধন সাপেক্ষে। আমাদের দাবি ছিল জুলাই সনদের আদেশ প্রকাশ করা ও আদেশটি কে জারি করবে এ বিষয়টি পরিষ্কার করা। সুপারিশে বলা হয়েছে আদেশ জারি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া গণভোটের কথা বলেছি। এটির মাধ্যমে পরবর্তী সংসদের হাতে সেই গাঠনিক ক্ষমতা থাকবে, যারা সংস্কার সংবিধান ২০২৬ তৈরি করবে। ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি বড় সংস্কারের বিপক্ষে ছিল। স্বাভাবিকভাবে গোটা সংস্কার প্রক্রিয়া তারা চায় কি না সেটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি ভেটো দিয়েছে। অন্য দলগুলো ঐকমত্য হওয়া ও জনগণের চাপের কারণে তারা সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আতিক মুজাহিদ, জেলা এনপিসির প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ গালিব, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী সাদিয়া ফারজানা দিনা প্রমুখ।