আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ ধরে প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে।
এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগে-পরে সার্বিক কাজের ফর্দ নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় আজ বসছে নির্বাচন কমিশন। বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি দেখে ভোটের দিনসহ তফসিল নির্ধারণ, ভোটের সময়ের আবহাওয়া তথ্য-পূর্বাভাস, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপতথ্য রোধে কৌশল নির্ধারণ, পোস্টাল ভোটিং, ভোট কেন্দ্রের স্থাপনা ও যাতায়াত থেকে নির্বাচনি সরঞ্জাম পরিবহনসহ প্রায় দুই ডজন বিষয়ে আলোচনা হবে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়। বৈঠকে উপস্থিত থাকতে ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গুরুত্বপূর্ণ যা আলোচনায় থাকছে-
ভোট কেন্দ্রের স্থাপনা, যাতায়াতে রাস্তা ও অবকাঠামো সংস্কার : নীতিমালা মেনে ভোট কেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভোট কেন্দ্রগুলোর কিছু প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কার, প্রবেশ পথ, যাতায়াত, বিদ্যুৎ সংযোগ, পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাসহ ভৌত অবকাঠামো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত : ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের তালিকা সংগ্রহ করে প্যানেল প্রস্তুত ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন রিটার্নিং অফিসার।
পার্বত্য এলাকায় সরঞ্জাম পরিবহন ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পৌঁছানো সহায়তা : পার্বত্য এলাকার তিন আসনের কিছু ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনি সামগ্রী পরিবহন ও কর্মকর্তা-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে যাতায়াতে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার হবে। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ভোট কেন্দ্রের তালিকা ধরে প্রয়োজনীয় হেলিপ্যাড মেরামতের ব্যবস্থা ও সংস্কার করতে হবে।
প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রম : বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও অন্যান্য মাধ্যমে আচরণবিধি, ভোটদান প্রক্রিয়াসহ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।
পর্যবেক্ষক নিয়োগে সহায়তা : দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমতি, নিরাপত্তা, ভিসা প্রদান, বিমানবন্দরে সহায়তার প্রয়োজন হবে।
ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনা : ঋণ খেলাপিরা ভোটে অযোগ্যতার বিধান রয়েছে। মনোনয়নপত্র বাছাইকালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও সরবরাহের জন্য কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা বাজেট বরাদ্দ : বর্তমান মূল্য ও বাস্তবতার ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনার বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ যৌক্তিক করারও প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্ভাব্য ব্যয়ের চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
জনবল, যানবাহন ও লজিস্টিক সাপোর্ট : নির্বাচন পরিচালনা ও কমিশনের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় জনবল প্রদান, যানবাহনের বাজেট বরাদ্দের অর্থের সংস্থান প্রয়োজন হবে। তাছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিভাগ বা দপ্তর থেকে নির্বাচনকালীন জনবল, যানবাহন ও লজিস্টিক সাপোর্ট লাগবে ইসির।
শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ : নির্বাচন শান্তিপূর্ণ রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও আচরণবিধি প্রতিপালন : সময়সূচি ঘোষণার পর প্রতিটি এলাকায় আচরণবিধি নিশ্চিতে মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রয়োজন হবে।
পরীক্ষা সময়সূচি পর্যালোচনা : প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ও নির্বাচনি পরীক্ষা এবং বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার সময় বিবেচনায় নিয়ে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখসহ নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণের প্রস্তাবনা প্রণয়ণের প্রয়োজন হবে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য পর্যালোচনা : এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি সময়ের দৈনন্দিন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ ইত্যাদি তথ্য ও আবহাওয়া পূর্বাভাস সংগ্রহ করে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণে সহায়ক হবে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ : ভোটের আগের দিন ভোট কেন্দ্রে ও ভোটের দিন এবং নির্বাচনের বিভিন্ন পর্বে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।
অগ্নিকাণ্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও ভোট কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড ও দুর্যোগ প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
নির্বাচনি প্রচার সামগ্রী অপসারণ : সময়সূচি ঘোষণার আগে বিদ্যমান পোস্টার-ব্যানার ও অননুমোদিত প্রচার সামগ্রী অপসারণে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। ‘দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’-এর বিধান অনুসারে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ হবে।
নির্বাচনকালীন যানবাহন ও নৌযান নিয়ন্ত্রণ : ভোটের আগে-পরে মোটরসাইকেলসহ কিছু যান ও নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রয়োজন হয়। চর ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার অনুমোদিত যানবাহন চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা : প্রবাসী বাংলাদেশি ও অভ্যন্তরীণ পোস্টাল ব্যালট নিরাপদ পরিবহন ও গণনায় ডাক বিভাগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জেলখানায় পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা : জেলখানায় থাকা ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেল কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবে।
এআই ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য রোধে কর্মকৌশল : এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে ভুয়া ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচার রোধে কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এ ছাড়া ভুল বার্তা যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্টরা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ : সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের অন্তর্ঘাত ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা নিতে বলবে ইসি।
বিবিধ : ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে এবং নিরাপদে ফিরে আসতে পারে- এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।